ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনে আতশবাজি পোড়ানো, ফানুস ওড়ানো ও উচ্চ শব্দে গান বাজানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকে প্রতিবছর। এবারও রাজধানীতে এসব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে উৎসব করতে গিয়ে ফানুসের আগুনে দগ্ধ হয়েছে তিন কিশোর। এদিকে, মেট্রোরেলের তারে ৩৮টি ফানুস জড়িয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়। এছাড়া গান-বাজনা ও শব্দদূষণের অভিযোগে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ৯৭১টি কল করা হয়েছে। 

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বছরের শেষ রাতে রবিবার রাত ১২টা বাজার আগে থেকেই ঢাকার অধিকাংশ এলাকা পটকাবাজির শব্দে প্রকম্পিত হতে থাকে। আতশবাজির আলোয় বর্ণিল হয়ে ওঠে আকাশ।

এদিকে, নগরজুড়ে আতশবাজি পোড়ানোয় বেশ কিছু জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, এক সপ্তাহ আগে থেকেই সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হয়। আতশবাজি, পটকাবাজি ও ফানুস ওড়াতে নিষেধ করা হয়। তবে এবার বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। তিনি সন্তানদের  সচেতন করতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান।

ফানুসের আগুনে দগ্ধ ৩
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর মুজিবর ঘাট সোহেল সাহেবের বাড়ির ছাদে ফানুস ওড়াতে গিয়ে আগুনে তিন কিশোর দগ্ধ হয়। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। দগ্ধরা হলো স্বপন ব্যাপারীর ছেলে সিয়াম এবং দানেশ ব্যাপারীর ছেলে রাকিব হোসেন ও রায়হান। সিয়ামের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

সিয়ামের খালাতো ভাই সজীব জানান, সে মুখে কেরোসিন নিয়ে আগুন জ্বালাচ্ছিল। অসাবধানতাবশত তার শরীরে আগুন ধরে যায়। সেই আগুন নেভাতে গিয়ে রাকিব ও রায়হান কিছুটা দগ্ধ হন। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম বলেন, রোববার  রাতে তিনজন দগ্ধ কিশোর হাসপাতালে আসে। তাদের মধ্যে সিয়ামের ৮৮ শতাংশ, রাকিবের ৬ শতাংশ, রায়হানের ২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।

মেট্রোরেলের তারে ফানুস
ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ওড়ানো ফানুস এবারও মেট্রোরেলের তারে আটকে যায়। তবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সতর্ক থাকায় কোনো সমস্যা হয়নি। এ ধরনের সমস্য তৈরি হতে পারে এই শঙ্কায় আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এ জন্য পুরো মেট্রোরেল পথকে ছয়টি সেকশনে ভাগ করে প্যাট্রলিং করা হয়েছে। এ সময় আটকে থাকা ৩৮টি ফানুস অপসারণ করেন রেলকর্মীরা।

মেট্রোরেল পরিচালনকারী ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ডিএমটিসিএলের কর্মীরা রাত ৩টার পর থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত টহল দিয়েছেন। এ সময় বিভিন্ন এলাকায় মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক তারে আটকে থাকা ৩৮টি ফানুস অপসারণ করা হয়েছে। স্পার্কিং হলে রেল চলাচল বাধাগ্রস্ত হতে পারত। ফানুস আটকে গত বছর মেট্রোরেল চলাচলে দুই ঘণ্টা দেরি হয়েছিল। এ বছর পুলিশের সহায়তা চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দেওয়া হয়।

৯৯৯-এ অভিযোগ
ইংরেজি নববর্ষকে বরণ করে নিতে কমতি ছিল না সারাদেশে। এর মধ্যেও উচ্চ স্বরে গান-বাজনা ও শব্দদূষণ-সংক্রান্ত অভিযোগে সারাদেশ থেকে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ৯৭১টি ফোনকল আসে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগর এলাকায় ২৩৭টি অভিযোগ এসেছে। ৯৯৯-এর গণমাধ্যম ও জনসংযোগ কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত এ-সংক্রান্ত কল এসেছে ৫২৬টি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর এলাকা থেকে সেবাপ্রত্যাশী ছিলেন ১০৭ জন। ১ জানুয়ারি ২০২৪ রাত ১২টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শব্দদূষণ-সংক্রান্ত ৪৪৫টি ফোন আসে। এর মধ্যে মহানগর এলাকা থেকে সেবাপ্রত্যাশী ছিলেন ১৩০ জন। ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি করে।