নির্বাচনে সেনাবাহিনী কী করতে পারবে, কী পারবে না

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:৪০
বাংলাদেশে সব নির্বাচনেই সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়েছে। ফাইল ছবি
আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চারদিন আগে থেকে মাঠে নামছে সেনাবাহিনী। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দিতে আজ বুধবার (৩ জানুয়ারি) থেকে মাঠে থাকবে সশস্ত্র বাহিনী। ৩ জানুয়ারি থেকে আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত আটদিন নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে সেনাবাহিনী।
সেনাবাহিনী কী করতে পারবে, কী পারবে না
অতীতেও নির্বাচনের সময় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে সেনাবাহিনী ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে কাজ করেছে।স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বেসামরিক বাহিনীগুলো সক্রিয় থাকার পরও কেন সেনাবাহিনীকে নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করার জন্য আহ্বান করা হয়? তাদের দায়িত্বের আওতাই বা কতটুকু?
নির্বাচন কমিশন বলছে, ‘স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে’ সহায়তা করার জন্য ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় সশস্ত্র বাহিনীকে নির্বাচনী দায়িত্বে মোতায়েন করা হবে।
নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের সাথে পরামর্শ করে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে সেনাবাহিনী। তারা (সেনাবাহিনী) নির্বাচনী আসনের বিভিন্ন নোডাল পয়েন্টে অবস্থান করবে। কোনও সংকটের ক্ষেত্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে সঙ্গে নিয়ে তারা ঘটনাস্থলে যাবে। এরপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ অনুযায়ী তারা কাজ করবে।
কোন আসনের কোথায় এবং কতগুলো ‘নোডাল পয়েন্ট’ থাকবে, তা নির্ধারণ করবেন আসন সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ সুপার সহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা নির্ধারণ করবেন সেনাবাহিনী কোথায় অবস্থান করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্বাচনী আসনগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ, অতি গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ– এই তিন ভাগে ভাগ করেছে।
ভোট কেন্দ্রে বড় ধরনের গোলযোগ যদি পুলিশ বা স্থানীয় প্রশাসন সামাল দিতে না পারে তখন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে যাবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ অনুযায়ী সেখানে পদক্ষেপ নেবে।
সিআরপিসির দণ্ডবিধি অনুযায়ী- ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী বল প্রয়োগ থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবে।
উদাহরণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “যদি ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার একটি রাস্তা কেউ বন্ধ কর রাখে, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী সেখানে যাবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে বুঝিয়ে বা বল প্রয়োগ করে সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা করবে।”
আইন অনুযায়ী, নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীর সাথে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকায় ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে তারা প্রয়োজনে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকলেও সেনাবাহিনী কোনও ঘটনায় মামলা করতে পারবে না বলে জানান নির্বাচন কমিশন সচিব।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচন থেকেই নির্বাচনকে ঘিরে সেনাবাহিনী মোতায়েনের রেওয়াজ চলে আসছে। ১৯৭৩ সালের নির্বাচন থেকে বাংলাদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েনের চল শুরু হয়। সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় ৩৮৮টি উপজেলায় ৩৫ হাজারেরও বেশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল।