২০২৩ সালে ২৯৩ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার এবং বিপুল পরিমাণ দেশি/বিদেশি অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করার কথা জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। জব্দ করা হয় ৬১৮টি বিভিন্ন প্রকার দেশি/বিদেশি অস্ত্র, ১০৩টি ম্যাগাজিন, ১ হাজার ৩৬২ রাউন্ড গোলাবারুদ, ২ হাজার ১৩৪টি বিভিন্ন ধরনের ককটেল, বোমা, গ্রেনেড এবং ৫৯.৫৩ কেজি বিস্ফোরক।

আজ বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংইয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, র‌্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে ঢাকা ও সীমান্তবর্তী জেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করে মোট ১৯ হাজার ৭৫৫টি বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র এবং ২ লাখ ৫৯ হাজার ৭০৩ রাউন্ড গোলাবারুদসহ মোট ১৪ হাজার ৪১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করা হয় রকেট লঞ্চার, গ্রেনেড, বিভিন্ন প্রকার শেল, ককটেল ও গোলাসহ বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ।

২০২৩ সালে র‌্যাবের উল্লেখ্যযোগ্য অভিযান

২০২৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-২ এর একটি যৌথ আভিযানিক দল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ পথে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান চক্রের হোতা মো. পলাশ শেখ (৩৮), মো. মনোয়ার হোসেন (৩২), রশিদুল ইসলাম (৪০), নাজীম মোল্লা (৩৫), মারুফ হোসেন (২৪) ও মো. নাইমুল ইসলামকে (২২) গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করা হয় একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ওয়ান শুটার গান, ৭টি একনালা বন্দুক, দুটি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ৮ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ওয়ান শুটারের গুলি ২ রাউন্ড, একনলা বন্দুকের গুলি ৬৭ রাউন্ড ও ০.২২ বোর রাইফেলের গুলি ৪০ রাউন্ড।

২০২৩ সালের ২০ মার্চ রাতে র‌্যাব-৫ এর একটি আভিযানিক দল রাজশাহী মহানগরীর বেলপুকুর রেলক্রসিং এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ২ জন অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ৪টি ওয়ান শুটারগান, ১ বোতল ফেনসিডিল, একটি মোটরসাইকেল, নগদ ৮ হাজার টাকা।

২০২৩ সালের ৫ মে র‌্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়া পাহাড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে একটি বিদেশি পিস্তল ও ৫ রাউন্ড গুলি, দেশীয় তৈরি ৩টি একনলা বড় বন্দুক, ২টি একনলা মাঝারি বন্দুক, ৬টি একনলা ছোট বন্দুকসহ মোট ১১টি দেশিয় তৈরি বন্দুক, ১৭ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ৪ রাউন্ড খালি কার্তুজ, ২টি ছুরি ও ৬টি দেশীয় তৈরি দাসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

২০২৩ সালের ৩১ মে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহায়তায়, র‌্যাব-১১ ও র‌্যাব-১৩ এর যৌথ অভিযানে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ এলাকার মোশা বাহিনীর প্রধান ও শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া ওরফে মোশা (৪৭) ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী দেলোয়ার হোসেনকে (৫২) গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে তাদের তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের নাওড়া এলাকা থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।

২০২৩ সালের ২১ জুলাই র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল কক্সবাজারের টেকনাফ থানাধীন বাহারছড়া-শ্যামলাপুরের গহীন পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করে ১টি ৭.৬৫ এমএম পিস্তল, ১টি বিদেশি রিভলবার, ১টি শর্টগান, ৪টি দেশীয় এলজি, ৩টি দেশীয় রামদা ও গোলাবরুদসহ সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’র (আরসা) শীর্ষ সন্ত্রাসী ও কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের অন্যতম সামরিক কমান্ডার হাফেজ নুর মোহাম্মদ, মোহাম্মদ হোসেন জোহার, মো. ফারুক ওরফে হারেস, মনির আহাম্মদ (৩৬), নূর ইসলাম ও মো. ইয়াছিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এক বছরে ৬১৮ দেশি-বিদেশি অস্ত্রসহ ২৯৩ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার 

২০২৩ সালের ৩০ জুলাই র‌্যাব-৫ একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন ও ৫ রাউন্ড গুলিসহ অস্ত্র ব্যবসায়ী মো. আতাউর রহমান ওরফে আতারুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

২০২৩ সালের ১২ আগস্ট র‌্যাব-৬ এর একটি আভিযানিক দল খুলনার দাকোপ ও মোংলার ইপিজেড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ আসাবুর বাহিনী ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

২০২৩ সালের ১৫ আগস্ট রাতে র‌্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল কক্সবাজার উখিয়া থানাধীন তেলখোলা বটতলী গহীন পাহাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে দুর্ধর্ষ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রাসেল বাহিনীর প্রধান শেখ রাসেল ওরফে ডাকাত রাসেলসহ ৭ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। এসময় উদ্ধার করা হয় ৬টি দেশীয় তৈরি একনলা বড় বন্দুক, ২টি এলজি, ১২ রাউন্ড শর্টগানের কার্তুজ, ৭ রাউন্ড রাইফেলের তাজা কার্তুজ ও ১ রাউন্ড খালি কার্তুজ, ১টি রামদা ও ২০ হাজার ইয়াবা।

২০২৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর র‌্যাব-৬ এর একটি আভিযানিক দল যশোরের শার্শার বাগআচঁড়া হাইস্কুল মার্কেটের সামনে থেকে কুখ্যাত মাদক, চোরাকারবারি ও অস্ত্র ব্যবসায়ী নাসির উদ্দীন ওরফে পিস্তল নাসিরকে ম্যাগাজিনসহ দুটি বিদেশি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটার গান, তিনটি রিভোলবার ৬টি দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও ১৯ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেপ্তার করে।

সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর রাতে র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল ঢাকার আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে দুটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, ৬ রাউন্ড গুলি, একটি বিদেশি রাইফেল, ২টি ম্যাগাজিন, ৫০ রাউন্ড গুলি, খালি খোসাসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও ভূমি দস্যু গ্রুপের মূলহোতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।