
ঘুড়ি উড়ানোর উৎসবে মেতেছে শিশু-কিশোর। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
শীতের দুপুরে নিভু নিভু সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে তখন পুরান ঢাকার আকাশে শোভা পাচ্ছে নানান রঙের ঘুড়ি। ঘুড়িতে ঘুড়িতে কাটাকাটি খেলার আনন্দে মেতেছে শিশু-কিশোর থেকে বিভিন্ন বয়সীরা। এ যেন এক ঘুড়ি সুতার দারুন মেলবন্ধন৷ ঘুড়ির খেলায় হেরে যাওয়া অভিমানী ঘুড়ি সুতার বাঁধন ছিঁড়ে উড়ে চলে গেছে দূর অজানায়। তা দেখে ব্যথিত হয়েছে ঘুড়িওয়ালা, কিন্তু ব্যথা ছাপিয়ে উল্লাসের ধ্বনিও বেজেছে চারপাশে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, ধোলাইখাল, শিংটোলা, মালিটোলা, ডালপট্টি মোড়, লক্ষ্মীবাজার, ফরাশগঞ্জ, সদরঘাট, গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর, নারিন্দা, কুলুটোলা, সুরিটোলা, নবাবপুর, শ্যামবাজার, শাঁখারি বাজার, বাংলাবাজার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, নারিন্দা এলাকায় বাসা বাড়ির ছাদ থেকে বা চিলেকোঠার উপর থেকে ঘুড়ি উড়ানোর উৎসবে মেতে উঠেছেন অনেকেই। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে আছেন অনেক দিনমজুরি ঘুড়ি প্রেমী মানুষ।
ঘুড়ি উড়ানো নিয়ে পঞ্চম শ্রেণির লিবান বলেন, প্রতি বছর এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করি। সবার সাথে একসাথে উড়াতে আমার দারুণ মজা লাগছে।
এ বিষয়ে পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা হামিদ পাটোয়ারী বলেন, এইটা আমাগো বাপ-দাদারা পালন করে আসছে। অহন আমগো পোলাপানরা করতাছে। এইভাবেই চলতাছে অনেক বছর থেইকা। পোলাপান মজ-মাস্তি করে, গান টান বাজায়। ভালোই লাগে সব মিইলা।
দিনের শেষে সন্ধ্যা নামলে শুরু হয় আতশবাজি ও ফানুস উড়ানো। রাতে ডিজে গানের সাথে নাচে অনেকেই, কেউবা আবার করবেন বারবিকিউ পার্টি। এছাড়াও আগুন নিয়ে খেলা এ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ। মুখ দিয়ে আগুন বের করে ছাদগুলো যেন আলোর এক দারুণ ঝলকানি উপহার দেয়। তবে সকালের তুলনায় বিকেলে এবং রাতে এ উৎসব বেশি মুখরিত হয়।
সাকরাইনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৪০ সালের পৌষ মাসের শেষ এবং মাঘ মাস শুরুর সন্ধিক্ষণে মোঘল আমলে নায়েব-ই-নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের আমলে ঘুড়ি উৎসবের প্রচলন হয়। সেই থেকেই এই উৎসবকে পালন করে আসছেন পুরান ঢাকার স্থানীয়রা।