Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

মন্ত্রিসভার চ্যালেঞ্জ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ

Icon

এম ডি হোসাইন

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:১৮

মন্ত্রিসভার চ্যালেঞ্জ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ

ফাইল ছবি।

আওয়ামী লীগের নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পরপরই চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত। বাজারে প্রত্যেকটি সবজির দাম বেড়েছে। মাছ-মাংসের দাম বেড়েছে। কিন্তু প্রশাসনের দৃশ্যমান অ্যাকশন নেই। তবে চালের বাজার তদারকে ৪টি গোপন দল কাজ করবে বলে জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। 

প্রতিদিন একটি দল অন্তত চারটি ওএমএস বিক্রয়কেন্দ্র এবং দুটি বাজার পরিদর্শন করবে। এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে এক নম্বর অগ্রাধিকার হলো- দ্রব্যমূল্য সকলের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

নতুন মন্ত্রিসভা ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কতটা সক্ষমতা দেখাতে পারবে, সে বিষয়টিই এখন আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। টানা চতুর্থ দফায় আওয়ামী লীগের নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জের মধ্যে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামলানো এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এ ছাড়া গত কয়েক মাস ধরে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ দেশের অন্যতম আলোচিত বিষয়। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুও বলেছেন, দ্রব্যমূল্যকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনাই তার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিমন্ত্রী আহসানুল বলেন, ডলারের দাম বাড়ার কারণে স্বাভাবিকভাবে দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। তারপরও কেউ যেন সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে সেজন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাশাপাশি সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও মজুদদারদের শক্ত হাতে দমন করা হবে।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য টিসিবি থেকে এক কোটি পরিবারকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে তেল, চিনি, ডালের পাশাপাশি রমজান মাসে ন্যায্যমূল্যে ছোলা ও খেজুরসহ পাঁচটি পণ্য বিতরণ করা হবে। বর্তমানে এক কোটি পরিবারের মধ্যে ২০ লাখ লোককে কার্ডের মাধ্যমে টিসিবি পণ্য বিতরণ করা হচ্ছে। বাকি ৮০ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষকেও টিসিবি পণ্য দেওয়া হচ্ছে। জুনের মধ্যে পুরো এক কোটি পরিবারকে কার্ডের আওতায় আনা হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বাজার ব্যবস্থাপনায় রাশিয়া-ইউক্রেন ও ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে খরচ বেড়েছে। এর প্রভাব আমাদের বাজারেও পড়েছে। ফলে অনেক কিছু দাম ওঠানামা করছে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে। এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন পরিকল্পনা হচ্ছে, সরবরাহের সময় কমিয়ে আনার। বাণিজ্য, অর্থ, কৃষি, খাদ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি টিম থাকবে। এই টিম কোনো চিঠির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করবে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলেছেন, নতুন-পুরনো মিলিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করা হলেও অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকবে। এর পেছনে তাদের যুক্তি হচ্ছে, পুরনোদের মধ্যে ৩০ জন মন্ত্রী বাদ পড়েছেন। কিন্তু পুরনোদের বড় অংশ মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। নতুন ১৪ জন প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় যুক্ত হয়েছেন। এর সঙ্গে অর্থ, বাণিজ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোতে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি সামলে নির্বাচনী ইশতেহার বা অঙ্গীকার বাস্তবায়নে দুর্বলতা ও যোগ্যতার প্রশ্ন আসতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ মনে করেন, মন্ত্রিসভার সদস্যদের অনেকের অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকতে পারে। কিন্তু অঙ্গীকার বাস্তবায়ন ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়টি নির্ভর করে দলনেতা ও সরকারের কৌশলের ওপর। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এর আগে চারবার সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি বন্ধ করা, বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করেই আওয়ামী লীগের নতুন সরকার এগোতে পারবে।

নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পরপরই চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত। বাজারে প্রত্যেকটি সবজির দাম বেড়েছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, গত সোমবার মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আপনারা দেখেন এখন থেকে কী হয়। 

দেশের অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী দেওয়া হয়নি। আহসানুল ইসলামকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় জায়গা পেলেন। যখন দ্রব্যমূল্য ও মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে একটা চাপ রয়েছে, তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতো বড় একটি মন্ত্রণালয় নতুন একজন কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়া কীভাবে এগিয়ে নেবেন, এ নিয়ে আলোচনা রয়েছে।

অর্থমন্ত্রী করা হয়েছে আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে। তিনি ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন; যদিও তিনি অর্থনীতি নিয়ে পড়েছেন। কিন্তু চাকরিজীবনে তিনি কূটনীতিক ছিলেন। ফলে নতুন সরকারের সামনে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে যখন বলা হচ্ছে, এমন পটভূমিতে অর্থ খাতে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই, এমন একজনকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ও আলোচনার সৃষ্টি করেছে।

দ্রব্যমূল্য সব মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, কর্মসংস্থান বাড়ানোসহ ১১টি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ দলটির নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নে বাণিজ্য, অর্থ, পরিকল্পনা ও কৃষিসহ যে মন্ত্রণালয়গুলো প্রধান ভূমিকা পালন করবে, সেসব মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অভিজ্ঞতার বিষয় আলোচনায় রয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশ একটা অবস্থান নেয়। ফলে তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের সম্পর্কের টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। এমন পটভূমিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন নতুন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

প্রথমবার মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী ১৪ জনের মধ্যে ১০ জনই ব্যবসায়ী। বাকিদের মধ্যে দুজন শিক্ষক ও একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। পুরনো যারা মন্ত্রিসভায় আছেন, তাদের বেশিরভাগই রাজনীতিক। আর টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া একজন পেশায় চিকিৎসক। 

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, এবারের মন্ত্রিসভা নিয়ে খুবই আশাবাদী বা একেবারে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সততা, দক্ষতা ও কাজের মাধ্যমেই মন্ত্রিসভার সদস্যদের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫