Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

‘জুয়া আইনে’ কঠোর শাস্তির সুযোগ নেই

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৬:০৪

‘জুয়া আইনে’ কঠোর শাস্তির সুযোগ নেই

গত এক সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন ক্রীড়া ক্লাবের জুয়ার আসর থেকে গ্রেপ্তার এবং ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে ১৮৬৭ সালের ‘প্রকাশ্যে জুয়া আইনে’ মামলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্রিটিশ শাসনামলের শুরুতে জারি করা ১৫২ বছরের পুরোনো এই আইনটি এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। এ আইনে জুয়া খেলার অপরাধে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা জরিমানা ও ৩ মাসের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। বিশেষ ক্ষেত্রে উভয় দণ্ড একত্রে কার্যকর করার বিধানও রাখা হয়েছে আইনটিতে। 

অন্যদিকে দেশে পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট, ১৮৬৭ নামের যে আইনটি রয়েছে সেটি রাজধানীতে প্রয়োগ করার সুযোগ নেই। এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা ছাড়া সমগ্র বাংলাদেশে ইহা প্রযোজ্য হইবে’।

ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৭৬-এর ৯২ ধারায় প্রকাশ্যে জুয়া খেলার জন্য মাত্র ১০০ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে।

রাজধানীর ক্লাবগুলো থেকে জুয়া এবং ক্যাসিনোর বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম জব্দ করা হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা বলছেন, ‘দুবল’ আইনের কারণেই আটকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। তারা জুয়াবিরোধী আইন যুগোপযোগী করার পক্ষে মত দিয়েছেন।

১৮৬৭ সালের জুয়া আইন দিয়ে ২০১৯ সালের ক্যাসিনো অপরাধের বিচার তাহলে কতটা যৌক্তিক? এমন প্রশ্ন করা হলে আইনজীবী ও সমাজবিজ্ঞানীরা আইনটি পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রযোজ্য অন্য আইনগুলোর সহায়তা নিয়ে জুয়াড়ি ও জুয়া সংশ্লিষ্টদের বিচারের প্রস্তাব দিয়েছেন।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবে প্রথম অভিযান চালায় র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। জুয়া-ক্যাসিনো চালানোয় ক্লাবের কর্ণধার যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গুলশানের বাসা থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

ওইদিনই মতিঝিলে ওয়ান্ডারার্স ক্লাব ও গুলিস্তানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাবেও অভিযান চালানো হয়। এসব অভিযানে জুয়া-ক্যাসিনোর বিপুল সরঞ্জাম, টাকা জব্দের পাশাপাশি ১৪২ জনকে আটক করা হয়।

যুবলীগ নেতা খালেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও মুদ্রাপাচার আইনে মামলা হয়েছে। এছাড়া আটক অন্যদের ছয় মাস থেকে এক বছর মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, মাদক রাখা ও সেবনের অভিযোগে তাদের এই সাজা দেওয়া হয়েছে।

মতিঝিল থানার ওসি ওমর ফারুক বলেন, “গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে কাউকে না পাওয়া গেলেও জুয়া-ক্যাসিনোর সামগ্রী মালামাল পরিত্যক্ত অবস্থায় পেয়েছি। ক্লাবগুলো সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। জব্দ করা মালামাল ধ্বংস করতে এবং টাকা কোথায় জমা দেওয়া হবে সে ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। আমরা এখনো এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা পাইনি।”

তিনি আরো জানান, তার থানা এলাকায় র‌্যাব যে অভিযান চালিয়েছে সেখানে জুয়া আইনে কোনো মামলা না হলেও মাদক এবং মানি লন্ডারিং আইনে একাধিক মামলা হয়েছে। ক্যাসিনো বা জুয়ার সরঞ্জাম জব্দ করার বিষয়ে থানায় র‌্যাব কোনো তথ্য দেয়নি বলেও জানান তিনি।

তবে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ঘটনায় করা মামলার বাদী র‌্যাব-৩-এর ওয়ারেন্ট অফিসার ফিরোজ ভূঁইয়া জানিয়েছেন, ওই ক্লাব থেকে তারা জুয়ার কোনো সরঞ্জাম জব্দ করেননি। কিন্তু ক্লাব সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।

র‌্যাবের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশের ৯২ ধারায় যে জরিমানার কথা বলা হয়েছে তা খুবই নগণ্য। এই ধারায় আটকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে তারা দ্রুত আদালত থেকে ছাড়া পেয়ে যাবে।

পুলিশের সাবেক আইজি নূর মোহাম্মদও অধ্যাদেশের দুর্বলতার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “ঢাকা মহানগর পুলিশ ট্রাফিক আইনে জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে সময়োপযোগী করেছে। জুয়া বা বাজির ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশে যে ধারা আছে সেটাও যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। 

ঢাকার একজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাও বলেছেন, ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশের ৯২ ধারাটি খুবই দুর্বল, একে আরো কঠোর করা প্রয়োজন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫