
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। ছবি: সংগৃহীত
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলে দবি করেছেন ডিএসসিসি-’র মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। রোববার (১৯ মে) ডিএসসিসির নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। মেয়র হিসেবে ফজলে নূর তাপসের দায়িত্বভার গ্রহণের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডিএসসিসি।
মেয়র তাপস বলেন, মেয়র হিসেবে চার বছরের দায়িত্বে সফলতার সঙ্গে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি।
লিখিত বক্তব্যে শেখ তাপস বলেন, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ৯ হাজার ৭৬৪ জন ডেঙ্গু রোগী পেয়েছি। তখন সারাদেশে রোগী ছিল ২ লাখ ৭১ হাজার ১৭৫ জন। যা মোট রোগীর মাত্র ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। ফলে সফলতার সঙ্গে আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি।
যদিও গত বছর (২০২৩) দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। কেবল ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে যত মৃত্যু হয়, তা আগের ২২ বছরে হয়নি। অর্থাৎ আগের ২২ বছরের চেয়ে গত বছর রোগীর সংখ্যা ছিল বেশি।
এ সময় মেয়র বলেন, দায়িত্বভার গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই করপোরেশনের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাফিলতি, অনিয়ম, দুর্নীতি দূর করার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমি শূন্য সহনশীলতার নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছি। প্রশাসনিক সংস্কারের আওতায় এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
তিনি বলেন, দায়িত্ব পালনে অবহেলা, গাফিলতি ও দুর্নীতির দায়ে বিগত ৪ বছরে বিভিন্ন স্তরের ৩৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। একই সঙ্গে করপোরেশনের প্রাত্যহিক কার্যক্রম সম্পাদনে জনবলের যে তীব্র সংকট ছিল তা উত্তরণে বিগত ৪ বছরে ভারী গাড়ির ১৪৩ জন চালক, ৬৬ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী, ৭৭ জন হিসাব সহকারী, ২৭ জন রেভিনিউ সুপারভাইজার, ৩১ জন পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক, ২০ জন স্প্রেম্যান সুপারভাইজারসহ বিভিন্ন বিভাগে সর্বমোট ৮৭৯ জন জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং ২১৭ জনের নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তাপস বলেন, কয়েকটি ব্যতিক্রম বাদে গত তিন দশকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। অতিরিক্ত দায়িত্ব, চলতি দায়িত্ব দিয়ে করপোরেশনের প্রাত্যহিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। এমন অনেকেই আছেন, যারা চাকরিতে যে পদে যোগদান করেছিলেন সে পদ হতেই পিআরএলে গেছেন। আমরা যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়ন করতে চাই। সেজন্য এই পদোন্নতি জট খুলে গত চার বছরে আমরা ১৫৭ জন যোগ্য প্রার্থীকে পদোন্নতি দিয়েছি। ফলে যেমন সুশাসন নিশ্চিত করা হয়েছে, তেমনি মাঠ পর্যায়সহ করপোরেশনের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে কর্মোদ্যম সঞ্চারিত হয়েছে বিধায় দুর্নীতি কমেছে এবং রাজস্ব আয় বেড়েছে।
মেয়র বলেন, বৈশ্বিক করোনা মহামারির সংকটকালে আমি দায়িত্বভার গ্রহণ করি। তথাপি করোনা মহামারির মাঝেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে প্রায় সকল খাতেই আমরা আমূল পরিবর্তন আনতে সচেষ্ট হই।
উল্লেখ্য,গতকাল শনিবার (১৮ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও ঢা-৬ আসনের সংসদ সদস্য সাঈদ খোকন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ২০১৯-এর তুলনায় ২০২৩ সালে ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৪২ হাজার কম ছিল। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ঢাকায় ৫৮ হাজার ১৯৮ জন ডেঙ্গু রোগী বেশি ছিল। ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা নিয়ে দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষ মনগড়া বক্তব্য দিয়েছেন। এছাড়া তিনি বতর্মান মেয়রকে (সরাসরি নাম বলেননি) ঢাকা দক্ষিনের ডেঙ্গু নিরাময়ে ব্যর্থ হিসেবেও অভিযুক্ত করেন।