Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে নিম্নআয়ের মানুষ

Icon

এম ডি হোসাইন

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২০, ০৮:৪২

নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে নিম্নআয়ের মানুষ

করোনাভাইরাস মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষ। কারণ দিনমজুর, রিকশা, ভ্যান ও গাড়িচালক, পরিবহন শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, চায়ের দোকানদারসহ যারা দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভর করে সংসার চালাতেন, তাদের আয়ের পথ পুরোপুরি বন্ধ।

এই সময়ে ঝুঁকি নিয়ে অনেকে ঘর থেকে বের হলেও কাজ জোটে না। ফলে অভাবী মানুষের ক্ষুধার যন্ত্রণা বাড়ছে। ত্রাণের দাবিতে পথে নামতে শুরু করেছেন কর্মহীন অসহায় মানুষ। তারা বলছেন, ‘করোনাভাইরাসের ভয় আছে; কিন্তু তার চেয়েও বড় হলো ক্ষুধার যন্ত্রণা।’ 

এদিকে রমজান শুরুর আগে সব নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে কারখানা লে-অফ করে দিয়েছেন অনেক পোশাক কারখানার মালিক। এতে ক্ষতিপূরণ হিসেবে শ্রমিকরা শুধু মূল মজুরির অর্ধেক ও বাড়িভাড়া পাচ্ছেন। ফলে সামনের দিনগুলোতে সংকট আরো বাড়বে। 

দেশের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের বিপুল পরিমাণে মানুষ করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় প্রায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে ফুটপাতের হকার, পরিবহন শ্রমিক ও দোকান কর্মচারী সবার একই অবস্থা। এই পরিস্থিতি যত দীর্ঘ হচ্ছে, সংকট ততবেশি বাড়ছে। একদিকে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে, সচ্ছল লোকজন বাসায় খাদ্য মজুদ করছেন। 

অন্যদিকে, নিম্নআয়ের মানুষ এখন চলছেন যৎসামান্য জমানো অর্থ ও ধার-কর্জ করে। নিম্নআয়ের মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন মহাবিপদে। কারণ এসব ব্যবসায়ী শুধু রমজান মাস বা ঈদকেন্দ্রিক বিভিন্ন ব্যবসা করে মূলত সংসার পরিচালনার বেশিরভাগ টাকা আয় করতেন। 

রাজধানীর কাওরানবাজার, ফার্মগেট, গাবতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, করোনাভাইরাসের এই সময়ে ঝুঁকি নিয়ে নিম্নআয়ের অনেক মানুষ ঘর থেকে বের হলেও কাজ জোটেনি। অবশেষে তারা ফুটপাতেই গাদাগাদি করে ঘুমিয়ে পড়ছেন। অনেক মানুষকে রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ক্ষুধার যন্ত্রণায় তারা স্বাস্থ্যবিধিও মানতে পারছেন না। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, সেটি আরো বাড়াতে হবে। কারণ চাহিদার চেয়ে এই বরাদ্দ অনেক কম। দরিদ্র শ্রেণির মানুষের জন্য বিশেষ বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নিম্নআয়ের মানুষকে শুধু ত্রাণ দিলে হবে না। তাদের সামাজিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসা ও বস্ত্রসহ সব চাহিদা পূরণ করতে হবে। এজন্য ত্রাণের পাশাপাশি নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন। করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতি দীর্ঘদিন বিদ্যমান থাকবে। ফলে ভাইরাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষকে সহায়তা দিতে হবে। কোনোভাবেই যাতে খাদ্য সংকট দেখা না দেয় সেদিকে সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’ 

রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মুনাফালোভী কিছু ব্যবসায়ী সব রমজানে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। করোনাভাইরাস সংকটে অনেক মানুষ কেনাকাটা করতে পারছে না। চাহিদা অনেক কমে গেছে। এর ফলে শাক-সবজিসহ অনেক পণ্যের দাম কম। একইভাবে অন্যান্য পণ্যের দাম কম থাকা প্রয়োজন। এজন্য সরকারকে কঠোর নজরদারি করতে হবে। নিম্নআয়ের মানুষ এমনি কিনতে পারছে না। দাম বেড়ে গেলে তাদের কষ্টের অন্ত থাকবে না। সাধারণ মানুষের জন্য যেন খাদ্য সংকট না হয়, সেজন্য সরকারকে সচেতন থাকতে হবে।’

রাজধানীর দরিদ্র মানুষের অভিযোগ, সরকার দরিদ্রদের জন্য প্রচুর খাদ্য বরাদ্দ দিলেও, কেউ তা পাচ্ছেন, কেউ পাচ্ছেন না। এমন অভিযোগ এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। উপরন্তু একের পর এক খাদ্যসামগ্রী চুরির ঘটনা গরিব মানুষদের ক্ষিপ্ত করে তুলছে। অঘোষিত লকডাউন ভেঙেই তারা বিক্ষোভ করছেন। 

এছাড়া তৈরি পোশাক খাত মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলেছে, করোনাভাইরাসের কারণে যতদিন উৎপাদন বন্ধ থাকবে, ততদিন শ্রম আইন অনুযায়ী কারখানাগুলো লে-অফ করতে পারবে। এতে পোশাকশিল্প কারখানায় লে-অফের হার আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ইতিমধ্যে ছাঁটাই হয়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে নিম্নআয়ের মানুষ। শহরের রিকশাচালক, দিনমজুর, গৃহপরিচারিকা, রেস্টুরেন্ট কর্মী, ক্ষুদ্র ভাসমান ব্যবসায়ী, অটোচালক, গ্রামের কৃষক, জেলে, দোকানি, বিদেশফেরত মানুষরা। এসব পরিবারের সংকট ও তা থেকে পরিত্রাণের উপায় এখনই খুঁজতে হবে। এজন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। নিম্নআয়ের মানুষের জন্য বিশেষ কোনো উদ্যোগ না নিলে তাদের যন্ত্রণা আরো বাড়বে। দেশের এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে খাদ্য সহায়তাসহ বিশেষ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা উচিত। এছাড়া খাদ্য সংকট যাতে দেখা না দেয়, সেজন্য বিশ্বের অনেক দেশেই নাগরিকদের জন্য খাদ্য সহায়তাসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে, বাংলাদেশেও এমন উদ্যোগ নেয়া উচিত।’

ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘দেশের প্রতিটি জেলায় পর্যাপ্ত চাল ও অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যেখানে যতটুকু সহায়তা দরকার, সেখান থেকে তা বণ্টন করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) প্রতিনিয়ত নিম্নআয়ের মানুষের তালিকা অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ে চাহিদা দিচ্ছেন। তাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। ত্রাণ সহায়তার মাঠ পর্যায়ের তালিকা জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হচ্ছে। নয়তো দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হতে পারে।’ 

প্রতিমন্ত্রী  জানান, প্রয়োজন হলে আরো সহায়তা দেয়া হবে। যতদিন করোনা পরিস্থিতি চলবে ততদিন দরিদ্র মানুষকে বিশেষ ত্রাণ সহায়তা দেয়ার কথাও জানান তিনি।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকা, উপজেলা ও জেলা সরকারিভাবে লকডাউন করা হয়েছে। এছাড়া সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এর প্রভাবে গত এক মাসে স্থানীয় বাজারে অত্যাবশ্যকীয় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে মসুর ডাল, আদা, দেশি রসুন ও পেঁয়াজের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়েছে। আমদানি মূল্যের কারণে স্থানীয় বাজারে এসব পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। 

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এমন পর্যালোচনা উঠে এসেছে। এ অবস্থায় কমিশন লকডাউন সীমিত করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কৃষকদের নষ্ট হতে যাওয়া শাক-সবজিসহ নিত্যপণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫