৬১ ট্রাক চালককে ২২তম দিনেও ফেরত নেয়নি ভারত

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২০, ১৮:২৫
-25-04-20-5ea42c4b2169e.jpg)
ভারতীয় চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর হয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দরে ৬১টি ট্রাক ভারতীয় পাটবীজ নিয়ে আসার ২২ দিন পেরিয়ে গেলেও চালকদের ফেরত নেয়নি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশি পাটবীজ আমদানিকারক ও স্থানীয় সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীরা আটকে পড়া ট্রাক চালকদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বাংলাদেশ থেকে তাদের ভারতে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারতীয় দূতাবাসকে চিঠি পাঠালেও কোন সাড়া দিচ্ছে না ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর গত ২২ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ সময় আমদানি করা ৬১টি পাটবীজ বোঝাই ট্রাক আটকা পড়ে ভারতে। পরে উভয় দেশের সরকারি নির্দেশে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে গত ৪ এপ্রিল বিশেষ ব্যবস্থায় বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে পাটবীজসহ ট্রাকগুলো বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়।
বাংলাদেশি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ওই দিনই ট্রাকগুলো খালি করে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করে। কিন্তু ফেরার সময় বাধা দেয় ভারতের চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দর ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। তখন থেকে ওই ৬১টি ভারতীয় ট্রাক ও ট্রাকের চালক আটকা পড়ে বুড়িমারী স্থলবন্দরে।
সরেজমিনে শনিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে বুড়িমারী স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, দেয়াল ঘেরা স্থলবন্দরের ইয়ার্ডের ভেতরে ট্রাক ও চালকদের রাখা হয়েছে। ট্রাকের ভিতরেই কাটছে দিন-রাত। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহযোগিতায় তারা নিজেদের রান্না করা খাবার খাচ্ছেন। এ সময় কথা হয় ভারতের বিহার রাজ্যের মতিহার জেলার পশ্চিম চম্পারণ এলাকার ট্রাক চালক ইজাহার আলীর সাথে।
তিনি বলেন, স্ত্রীকে একদিনের কথা বলে মহাজনের গাড়িতে পাটবীজ নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। ট্রাক খালি করে চেকপোস্টে গেলেই গাড়িগুলো আটকে দেয়। লকডাউনের কারণে ঢুকতে দেয়া হয়নি ভারতে। বাড়িতে তার একমাত্র ছেলে ও স্ত্রী থাকে। স্ত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
তার মতো আরো ৬১জন ভারতীয় ট্রাকচালক বুড়িমারী স্থলবন্দরে আটকে পড়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন। তারা গত ৪ এপ্রিল বিশেষ অবস্থায় পাটবীজ নিয়ে এ দেশে এসেছিলেন। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানিয়েও কিছু হচ্ছে না। ফলে ২২দিন ধরে ট্রাকেই কাটছে তাদের দিন রাত।
ট্রাকচালক আলতাফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ সরকার অনেক চেষ্টা করছে আমাদের দেশে পাঠানোর জন্য। কিন্তু ভারত সরকার আমাদের দেখছেন না। আমাদের পরিবারের কথা ভাবছেন না। তবে মমতা দিদি তাদের দিকে তাকালে তারা দেশে ফিরতে পারেন বলেও জানান ভারতের এ ট্রাক চালক ।
ঢাকার সিদ্দিক বাজার এলাকার মেসার্স রফিক এন্টারপ্রাইজ পাটবীজ আমদানি কারক আলমগীর মিয়া বলেন, পাটবীজ রফতানি করে অর্থ আয় করেছে ভারত সরকার। এখন গাড়ী ও চালকদের ফেরত নিতে দেরি করছেন। তিনি উভয় দেশের দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি আন্তরিকতার সাথে দেখার অনুরোধ করেন।
এ ব্যাপারে বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমস্ সহকারী কমিশনার (এসি) সোমেন কুমার চাকমা বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে যে কোনো মুহূর্তে ট্রাক চালক ও গাড়িগুলো ফেরত পাঠানো হবে।
বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (ডিডি) মাহফুজুল ইসলাম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থলবন্দরের ইয়ার্ডের ভেতরেই ট্রাক ও চালকদের রাখা হয়েছে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন, সিএন্ডএফ এজেন্ট ও আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা খাদ্যদ্রব্য কিনে দিচ্ছেন। চালকরা নিজেরাই রান্না করে খাচ্ছেন।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, চালকদেরকে ফেরত না নেয়ার বিষয়টি ভারতীয় দূতাবাস ও কোচবিহার জেলা শাসককে (ডিএম) জানানো হয়েছে। তারা কেন্দ্রীয় সরকারকে অবহিত করেছেন। তবে কোনো নির্দেশনা এখনো আসেনি।