
পাঞ্জেগানা মসজিদ। ছবি: লেখক
বরিশালের চরমোনাইয়ের হোগলারচর গ্রামে গাজী কালু দরগাবাড়ির পাঞ্জেগানা মসজিদ। চোখজুড়ানো স্থাপত্য কিংবা পোড়ামাটির কারুকাজ, কোনোটাই নেই এ মসজিদের। কিন্তু এর আকর্ষণ বা বিশেষত্ব হচ্ছে আকার এবং স্থানীয় নানা কিংবদন্তি। মসজিদটি আকারে এতই ছোট যে, মাত্র তিন থেকে পাঁচজন মানুষ একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন। আর এ মসজিদটিকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে প্রাচীন এক অশ্বত্থ গাছ। স্থানীয় ভাষায় গাছটি ‘লাহর’ নামে পরিচিত।
মসজিদের রয়েছে একটি দরজা, দুটি জানালা এবং একটি গম্বুজ। মসজিদের ভেতরের উচ্চতা সাড়ে ১২ ফুট, দৈর্ঘ্য ৬ ফুট এবং প্রস্থ ৫ ফুট। ঠিক কবে এ মসজিদ তৈরি হয়েছে সে সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায়নি। তবে স্থানীয়রা অনেকে ধারণা করেন এটি পর্তুগিজদের আগমনের সময়কার। কেউ কেউ এটিকে আবার ‘কানা মসজিদ’ বলেও আখ্যায়িত করেন।
আকার ও ঐতিহাসিক বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি মসজিদটি নিয়ে রয়েছে অলৌকিক কিংবদন্তিও। মসজিদটি ঘিরে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা অশ্বত্থ গাছটি নিয়ে রয়েছে নানা অলৌকিক গল্প। কেউই এই মসজিদকে জড়িয়ে থাকা গাছের ডাল ভাঙা তো দূরের কথা, একটি পাতাও ভুলক্রমে ছেঁড়েন না। এমনকি গাছ থেকে যে পাতা ঝরে পড়ে, তা নিচেই পড়ে থাকে। জ্বালানি হিসেবেও কেউ ব্যবহার করেন না। গ্রামবাসী বিশ্বাস করেন, কেউ যদি এই গাছের ডাল ভাঙেন, কিংবা পাতা ছেঁড়েন তবে তার কোনো বিপদ হবে।
অশ্বত্থ গাছটি মসজিদকে এমনভাবে জড়িয়ে রেখেছে যে, বাইরে থেকে প্রথম দেখায় বোঝার উপায় নেই যে এখানে একটি মসজিদ রয়েছে! এই মসজিদে শুক্রবারে জুমার নামাজ হয় না। এটি পাঞ্জেগানা মসজিদ। স্থানীয়রা আরও বিশ্বাস করেন, গায়েবিভাবেই এই মসজিদটি তৈরি হয়েছে। অনেকে আবার এ-ও দাবি করেন, রাতে এ মসজিদে সাদা কাপড় পরিহিত অস্বাভাবিক আকৃতির লোকদের নামাজ পড়তে দেখেছেন।
তবে পুরনো দলিলের রেকর্ডপত্রে আব্দুল মজিদ সিকদার ও বন্দে আলী সিকদার নামে দুই ব্যক্তির নাম খতিয়ানে পাওয়া যায়। সেখানে ২১ শতাংশ জমি মসজিদের নামে জনসাধারণের ব্যবহারের কথা উল্লেখ করা রয়েছে। মসজিদের পরিচিতি অনুসারে স্থানটি মসজিদবাড়ি হিসেবে পরিচিত।
বরিশালের এই মসজিদটি ছাড়াও দেশের আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় ছোট আকৃতির মসজিদের দেখা মেলে। এর মধ্যে বগুড়া জেলার সান্তাহারের তারাপুর গ্রামে এক গম্বুজ বিশিষ্ট প্রাচীন একটি মসজিদ রয়েছে, যেখানে মাত্র তিনজন মানুষ এক সঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন। জনশ্রুতি রয়েছে, ১৭৭০ থেকে ১৭৯০ খ্রিষ্টাব্দের কোনো এক সময় তারা বানু নামের একজন নারীর নামাজ পড়ার সুবিধার্থে রানী ভবানী এ মসজিদটি নির্মাণ করেন।