
পশুর হাট। ছবি- সংগৃহীত
সামনে সুসজ্জিত গেট। নান্দনিক সাজ। নানা রঙের কাপড়ের শামিয়ানা। রঙিন আলোর ঝলকানি। ঝুলছে দামি ঝাড়বাতি। বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। ক্রেতার বসার জন্য সুন্দর ব্যবস্থা। আছে চা-কফি, নাশতাসহ নানা পানীয়। রাত যত গভীর হচ্ছে ক্রেতার সারি বাড়ছে। সাধারণ কোনো ক্রেতা নয়, দামি গাড়ি হাঁকিয়ে অভিজাত এলাকা থেকে সপরিবারে মনোরম পরিবেশে কোরবানির পশু দেখতে আসছেন।
নেই মানুষের ঠেলাঠেলি। হাঁটের মতো কাদাজল
মাড়াতে হয় না। কোরবানির পশু বাছাইয়ের ঝক্কিও নেই। পাকা মেঝেতে ঘরোয়া পরিবেশে দেখা
যাচ্ছে তাদের। প্রয়োজনে দামি মডেলের মতো হাঁটিয়ে দেখারও ব্যবস্থা আছে। তবে পশুর
দশাসই শরীর, আর অভিজাত
দেমাকের কারণে একাধিক রশি লাগিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। আস্ত গরুর ওজন হচ্ছে
ডিজিটাল মেশিনে। আছে বদলের সুযোগও। কী নেই এখানে-খাসি, গরু, মহিষ, দুম্বা, উট, ভেড়া, গাড়ল, গয়াল, পাঙ্গানুসহ হাজারো পশুর বিশাল সমারোহ।
পবিত্র ঈদুল
আজহার জন্য গবাদিপশু কেনার এমন আয়োজন আছে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন খামারে। অভিজাত
ক্রেতাদের এসব খামারই পছন্দ; দাম কোনো বিষয়
নয়। পছন্দ হলেই হলো- দেড় কোটি টাকার গরু আর ১৫ লাখ টাকার ছাগলও নিমিষেই কিনে নিয়ে
যাচ্ছেন। দামি বিদেশি পশু কিনে ঈদে বিলাসিতার ছোঁয়া রাখতে চাচ্ছেন এসব ব্যক্তি। এ
ক্ষেত্রে কে কত বড় গরু কোরবানি দিতে পারেন সেই প্রতিযোগিতাও চলে।
শৌখিন ক্রেতার
কথা চিন্তা করে প্রতিবছরই বিদেশ থেকে গরু আমদানি করেন খামারিরা। রাজধানীর
মোহাম্মদপুরে সাদিক এগ্রোতে বিত্তশালী ক্রেতার আনাগোনা বেশি। এই খামারে সবচেয়ে
দামি গরুর দাম কত? ভাবছেন ৫ লাখ
কিংবা ২০ লাখ? লাখ নয়, আড়াই কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে দুটি গরু। ৭৫ লাখ
টাকায় আরও একটি গরু বিক্রি হয়েছে। আর একটি ছাগলই বিক্রি হয়েছে ১৫ লাখ টাকায়। আর ২৫
লাখ টাকায় এক উট বিক্রি হয়েছে। রাজধানীর সাদিক এগ্রো থেকে তিনটি গরু ৩ কোটি ২৫ লাখ
টাকায় কিনেছেন ঢাকার এক ক্রেতা। বিক্রি হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাহামা জাতের তিনটি
গরু এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে দামি গরু। এর মধ্যে দিয়ে কোরবানির বাজারের ইতিহাসে
তৈরি হলো নতুন মাইলফলক।
সাদিক এগ্রোর
স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, এই গরুগুলোকে সরাসরি আমেরিকার টেক্সাস থেকে প্লেনে করে নিয়ে আসা হয়েছে।
বাংলাদেশেও যে দামি গরুর ক্রেতা আছে তা কোটি টাকার গরু বিক্রির মাধ্যমে প্রমাণ
হয়েছে। এই জাতের গরু মোস্ট লেস কোলেস্টেরল যুক্ত মাংস উৎপাদনকারী গরু। এই গরুর
মাংস খেলে কোলেস্টেরল কম হবে। মাংসগুলো খুবই উন্নত মানের। বিশ্বে এর চেয়ে দামি
গরুও আছে। গত মার্চে ব্রাজিলে একটি গাভী ৫২ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সাদিক এগ্রোর
মালিক মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে
সব বাজেটের ক্রেতার জন্যই কোরবানি উপযোগী পশু আছে। ১৫ হাজার থেকে শুরু করে ১৫ লাখ
টাকা পর্যন্ত দামের ছাগল আছে। শুধু ছাগল নয়, গরু, মহিষ, দুম্বা, উট, ভেড়া, গাড়ল, গয়াল, পাঙ্গানুর গরুসহ সাড়ে ৩ হাজার পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। আমাদের
কাছে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে দেড় কোটি টাকার গরু আছে।
মোহাম্মদপুরের
আরেক অভিজাত খামার মদিনা ক্যাটেল ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হোসেন সজীব
জানান, খামারের ৫০ শতাংশ পশু
বিক্রি হয়ে গেছে। এ ছাড়া বুকিং তো চলছেই। গত বছরের তুলনায় যদিও সাড়া কম, তারপরও বেচা-বিক্রি ভালো হচ্ছে।
খামার থেকে গরু
কিনলে ঈদের দিন সকালে পৌঁছে দেওয়া হবে ক্রেতার বাড়িতে, এমন সুযোগও রয়েছে। আবার গরু জবাই করে মাংস
প্রস্তুত করে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
মোহাম্মদপুর
বেড়িবাঁধ এলাকায় কয়েকটি খামার ঘুরে দেখা যায়, খামারিরা আট-দশ বছর ধরেই পশুপালনের সঙ্গে
যুক্ত। এদের বেশির ভাগ ঢাকায় নিজস্ব খামারে গবাদিপশু লালনপালন করেন। কেউ আবার
ঢাকার কাছে কিংবা অন্য কোনো জেলায় কৃষকদের কাছে চুক্তিতে পশু বড় করার জন্য দিয়ে
রাখেন। আর ঈদের সময় এনে বিক্রি করেন ঢাকার আস্তানায় রেখে।
নিয়মিত খামারিরা
তাদের পশু বিক্রির জন্য বেশির ভাগ সময়
হাটে তোলেন না। বিজ্ঞাপন ও ফেসবুকে প্রচারণাসহ ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে
ক্রেতাদের খামার থেকেই গরু কিনতে আকৃষ্ট করেন।
হাটের বদলে খামার থেকে গরু কেনার কারণ জানতে গুলশান থেকে আসা সুমি আক্তার বলেন, খামার থেকে কেনার বিষয়টি অপেক্ষাকৃত স্বস্তির মনে হলো। এখানে একটা নিশ্চয়তাও পাওয়া যায়। যেমন কিনে নেওয়া গরু অসুস্থ হয়ে পড়লে সেটি আবার বদলে দেওয়ার কথা বলেছেন খামারের ব্যবস্থাপক। হাটে তো এই সুবিধা পাওয়া যাবে না। আর ঈদের আগে আগে খামারি নিজেই গরু বাসায় পৌঁছে দেবেন।