Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

ছাগলকাণ্ডের মতিউরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যত অভিযোগ

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ১৬:২৪

ছাগলকাণ্ডের মতিউরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যত অভিযোগ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সাবেক সভাপতি মো. মতিউর রহমান। ফাইল ছবি

ছাগলকান্ডের কারণে সামনে এসেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সভাপতি মো. মতিউর রহমান দুর্নীতির বিষয়টি। দুদকের অনুসন্ধানে এ বিষয়টির সত্যতাও মিলেছে। দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তদন্তে গণমাধ্যমে মতিউর রহমানের সম্পদ, আয় ও অর্থ পাচার-সম্পর্কিত বিভিন্ন সংবাদ আমলে আনা হয়েছে। মতিউরের বিরুদ্ধে ব্যাংকিং চ্যানেলে ও হুন্ডির মাধ্যমে দুভাবেই অর্থ পাচার করার অভিযোগ আছে। জানা গেছে, পাচার করা অর্থ দিয়ে কানাডা ও দুবাইয়ে বাড়ি, ফ্ল্যাট ও দোকান কিনেছেন। 

নাম প্রকাশ না করে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মতিউরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। এসব অভিযোগ আমলে এনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), এনবিআর, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, সিআইডিসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যে যার অবস্থান থেকে তদন্ত শুরু করেছে। সরকারের ওপরের মহল থেকে মতিউরের আয়-ব্যয় ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের প্রকৃত হিসাব খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে এরই মধ্যে মতিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বক্তব্য চাওয়া হয়েছে। অবশ্য মতিউর রহমান নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। 

মতিউরের দুর্নীতি তদন্তের দাবি জানিয়ে জমা হওয়া আবেদনপত্র থেকে জানা যায়, বন্ড কমিশনারেট থেকে শতভাগ রপ্তানিমুখী কোন কোন প্রতিষ্ঠান শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির সুবিধা পাবে তার অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০০০ সালে মতিউর রহমান রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার হিসেবে যোগ দেন। 

মতিউর রহমান জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে কাগজে-কলমে পাঁচটি রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে শুল্কমুক্ত সুবিধাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা হিসেবে গাজীপুর, সাভার, পুরান ঢাকার বিভিন্ন ঠিকানা উল্লেখ করেন। এসব প্রতিষ্ঠানের বাস্তবে কোনো অস্তিত্বই নেই। 

এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে মতিউরের কাছের লোক বলে পরিচিত অনেকের নাম দেওয়া হয়। নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকে এলসি খুলে নামমাত্র মূল্যের কাঁচামাল আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করে চার বছরে ১২০ কোটির টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন। 

অন্যদিকে বাস্তবে কম পরিমাণের কাঁচামাল আমদানি করলেও কাগজে-কলমে বেশি পরিমাণের, বেশি দামের কাঁচামাল আমদানির কথা বলে গত চার বছরে হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার করেছেন বলে অভিযোগ করা আছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, পাচার করা অর্থে কানাডা ও দুবাইয়ে একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট কিনেছেন মতিউর। দুবাইয়ে একাধিক দোকানও কিনেছেন। পাচার করা অর্থ দুবাইয়ে গচ্ছিত রাখা হয়েছে। দুবাইয়ে একটি হোটেলের অংশীদারও তিনি। 

অভিযোগে মতিউরের ভাই কাইয়ুম ও তার স্ত্রীর নামে একাধিক তৈরি পোশাকশিল্পের কারখানা থাকার কথাও বলা হয়েছে। কাইয়ুম একসময় গার্মেন্টসকর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। মতিউর তার অনেক সম্পদ কাইয়ুমের নামে করেছেন। অনেক ব্যাংক মতিউরের প্রায় ৫৪ কোটি টাকার এফডিআর তার ভাই ও তার দুই স্ত্রীর নামে। কাইয়ুম এখন শিল্পপতি। 

টঙ্গীর রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান এসকে ট্রিম অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এবং কামরাঙ্গীরচরের এসকে থ্রেড নামের সুতা উৎপাদন কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউরের ভাই কাইয়ুম। যার প্রকৃত মালিক মতিউর। ভালুকা ও বরিশালের গ্লোবাল সুজ লিমিটেডের অংশীদারও তিনি। মতিউরের ভাইয়ের স্ত্রী কুলসুমের নামে বন্ড লাইসেন্স নেওয়া হয়েছে। 

এসব কারখানার নামেও অর্থ পাচার করা হয়েছে। এসব কারখানায় ব্যবহারের কথা বলে কাঁচামাল আমদানি করে একইভাবে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। এসব পণ্য দিয়ে কোনো পণ্য বানানো হয়নি। নিম্নমানের পণ্য খোলাবাজার থেকে নামমাত্র মূল্যে কিনে রপ্তানি করা হয়েছে্। 

মতিউরের আরেক ভাই নূরুল হুদাও একসময় বেকার ছিলেন। হঠাৎ তিনি কোটিপতি বনে যান। ফার্মগেটের অর্কিড প্লাজায় অবস্থিত সাইমুম অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড এবং অপর একটি গার্মেন্টসের মালিক তিনি। 

শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ায় অন্যতম শর্ত হলো- আমদানীকৃত কাঁচামালের সবটা দিয়ে রপ্তানীকৃত পণ্য বানাতে হবে। মতিউর রহমান জাল কাগজপত্র দিয়ে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানি করলেও রপ্তানির জন্য একটি পণ্য তৈরি করেননি। 

মতিউর বিভিন্ন দপ্তরে কাজ করার সময়ে দুর্নীতির অভিযোগ সীমা ছাড়িয়ে গেলে তাকে বদলি করতে বাধ্য হয়। মোট অঙ্ক দিয়ে অনেক সময়ই বদলি ঠেকিয়ে দিয়েছেন। মতিউর শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগে পোস্টিং বাগিয়ে নেন। দীর্ঘদিন এখানে দায়িত্ব পালন করে ২০০৬ সালের শেষ দিকে তিনি বদলি হন চট্টগ্রাম বন্দর হাউসে। শুল্ক গোয়েন্দার দায়িত্বে থাকাকালে সৎ ব্যবসায়ীদের ফাইল আটকে রেখে বিভিন্নভাবে হয়রানি করতেন। মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে তিনি এসব ফাইল ছেড়ে দিতেন। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫