Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

বিশুদ্ধ পানির অপর নাম মিনারেল ওয়াটার!

Icon

সুজিত সজীব

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ২২:৩৩

বিশুদ্ধ পানির অপর নাম মিনারেল ওয়াটার!

নিরাপদ পানি হিসেবে মানুষ মিনারেল ওয়াটার পান করেন। ছবি: সংগৃহীত

বলা হয়, পানির অপর নাম জীবন। তবে ঢাকাবাসীর জন্য এ কথাটি হয়তো পুরোপুরি প্রযোজ্য নয়। কারণ এখানে ‘নিরাপদ ও বিশুদ্ধ’ পানির অপর নাম জীবন। দুই কোটি জনসংখ্যার ঢাকায় পানযোগ্য পানি সংগ্রহের প্রধান উৎস ঢাকা ওয়াসা। এ ছাড়া ব্যাঙের ছাতার মতো পাড়া-মহল্লায় গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন পানি বিক্রির প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন কোম্পানির বোতলজাত মিনারেল ওয়াটার। এই উৎসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ হিসেবে মানুষ মিনারেল ওয়াটার পান করেন। 

গত বছর বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) একটি গবেষণা প্রতিবেদনে জানায়, রাজধানীতে ঢাকা ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি ৯১ শতাংশ গ্রাহকই ফুটিয়ে পান করেন। তবে ওয়াসার পক্ষ থেকে প্রতিবেদনটিকে ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে সংস্থাটির প্রধান বলেছিলেন, ‘সাধারণ মানুষের জন্য ওয়াসার পানি সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং ঝুঁকিমুক্ত।’ সেই ‘শতভাগ নিরাপদ’ সুপেয় পানির শরবত ওয়াসা-প্রধানকে খাওয়াতে ওয়াসা ভবনের সামনে সপরিবারে চলে এসেছিলেন জুরাইনের এক বাসিন্দা। 

এ ছাড়া ঢাকার অনিরাপদ পানির জন্য কম দায়ী নয় সিটি করপোরেশনও। তাদের অনিয়ন্ত্রিত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ওয়াসার পানির সরবরাহ পাইপের সঙ্গে মিলেমিশে নাগরিকদের পানি পানকে করে তুলেছে বিভীষিকাময়। এ ছাড়া রাজধানীর জারের পানি সম্পর্কেও রয়েছে নানা অভিযোগ। 

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন বোতলজাত ও জারের পানিতে আছে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী ই-কলি (Escherichia coli) ব্যাকটেরিয়া। এ ছাড়া অনেকেই বৈদ্যুতিক পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র বা ওয়াটার পিউরিফায়ার ব্যবহার করছে। এর মাধ্যমে বিশুদ্ধ করা পানি নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। ফলে শহরাঞ্চলে নিরাপদ পানির উৎসের অভাবে বোতলজাত পানির ওপর ভোক্তার নির্ভরতা বাড়ছে। 

বোতলজাত পানির উৎপাদনকারীরা জানান, শহরাঞ্চলে বিশুদ্ধ ও নিরাপদ খাওয়ার পানির উৎস সীমিত হয়ে পড়েছে। ঢাকা ওয়াসা এবং জারের পানিতে নানা ধরনের দূষণের উপস্থিতি উৎস দুটির ওপর আস্থাহীনতা তৈরি করেছে। এই সুযোগেই ব্যবসা বাড়ছে বোতলজাত পানির। প্রতিবছর প্রায় ৩৫-৪০ কোটি লিটার মিনারেল বোতলের পানি বিক্রি হয়। যা টাকার অঙ্কে ৮৫০-৯৫০ কোটির কাছাকাছি। বোতলের পানির বাজার বাড়ছে প্রায় ২০ শতাংশ হারে। 

নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে বোতলজাত পানির ব্যবসা শুরু হয়। সে সময় বোতলের পানির ব্যবহার ছিল আভিজাত্যের বহিঃপ্রকাশ। পরিস্থিতি বদলে বোতলজাত পানি এখন দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হোটেল রেস্টুরেন্ট, বাইরে ঘুরতে গেলে, অফিস আদালতের অনুষ্ঠান ও নিয়মিত ব্যবহার, বিয়ে-শাদির অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে বোতলজাত পানি নিয়মিত ব্যবহার হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে পেপসিকো (অ্যাকুয়াফিনা) ও ২০১৬ সালে কোকাকোলার (কিনলে) মতো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি বাংলাদেশে পানির ব্যবসায় আসে। দেশে এখন ৩০টিরও বেশি পানির ব্র্যান্ড রয়েছে।

ধানমন্ডির বেসরকারি চাকরিজীবী আসাদুল হক রাজন বলেন, রেস্টুরেন্টে কোনো খাবার খাওয়ার পর সর্বোচ্চ দুই টাকায় দুই গ্লাস পানি খেতাম। কিন্তু এগুলোতে মলমূত্রের জীবাণু পাওয়ার পর থেকে এ পানি খাওয়া বন্ধ করেছি। প্রয়োজনে ২০ টাকায় আধা লিটার পানি কিনে খাই। তবে এভাবে নিরাপদ পানি পানে পকেটের অবস্থা তো বেগতিক হয়ে যাচ্ছে। 

শুধু দেশেই না, বিশ্বব্যাপীই দ্রুত বাড়ছে পানির ব্যবসা। নেসলে, পেপসিকো, কোকাকোলার মতো প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত বিশ্বব্যাপী তাদের বাজার সম্প্রসারণ করছে। এশিয়া, ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন ব্যবসা নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান দ্য বিজনেস রিসার্চ কোম্পানির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী বিগত তিন বছরে গড়ে প্রতিবছর পানির ব্যবসার পরিমাণ ছিল ২৩৮ বিলিয়ন ডলার এবং পানি বিক্রি হয়েছে ৪৩৭ বিলিয়ন লিটার।

এদিকে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে বেড়েছে ওয়াসার পানির দাম। এ নিয়ে গত ১৬ বছরে ১৬ বার পানির দাম বাড়িয়েছে ওয়াসা। গ্রাহকরা বলছেন, ওয়াসার উচিত, আগে ঢাকা শহরে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা। তা না করে প্রতিবছর পানির দাম বাড়ানো বেমানান।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫