Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

সারাদেশে ‘ব্লক রেইড’ চলছে , ৯ দিনে গ্রেপ্তার ১১ হাজার

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৪, ১৪:২৮

সারাদেশে ‘ব্লক রেইড’ চলছে ,  ৯ দিনে গ্রেপ্তার ১১ হাজার

সারাদেশে ‘ব্লক রেইড’ চলছে , ৯ দিনে গ্রেপ্তার ১১ হাজার মানুষ। ছবি: সংগৃহীত

কোটা আন্দোলনে সহিংসতা ও নাশকতাকারীদের ধরতে রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের ‘ব্লক রেইড’ চলছে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহীনবাগ এলাকায়  ব্লক রেইড দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সে এলাকার মুদি দোকানদার হাফিজুর ইসলাম জানান,  রাত ১১টার দিকে আকাশে হেলিকপ্টারের শব্দ শোনা যায়। এ সময় হঠাৎ সাইরেন বাজিয়ে মহল্লার চারপাশ ঘিরে ফেলেন সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। হ্যান্ডমাইকে পুলিশের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালাবে। কেউ বাসা থেকে বের হবেন না।’ ঘোষণা শেষ হতেই সড়কের বাতি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। বাসায় ঢুকেই পুলিশের প্রশ্ন—আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে সহিংসতা চালিয়েছে, এমন কেউ বাসায় আছেন কি না। এরপর প্রশ্ন চলে একের পর এক, সঙ্গে চালানো হয় ঘরের প্রতিটি কোনায় তল্লাশি। জবাবের হেরফের হলেই গ্রেপ্তার।

মুদিদোকানি হাফিজুর ইসলামের দাবি, সে রাতে এলাকা থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, সংঘাত, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জানা গেছে, গতকাল শনিবার (২৭ জুলাই) পর্যন্ত ১১ দিনে মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি জেলায় কিছুসংখ্যক ব্যক্তিকে পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু জেলায় গ্রেপ্তারের আরও তথ্য জানা গেছে। সব মিলিয়ে গতকাল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৯ হাজার ১২১ জন।

এর আগে গত শুক্রবার পর্যন্ত সারা দেশে সাড়ে ছয় হাজারের বেশি গ্রেপ্তারের তথ্য ছিল। 

অভিযান সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঢাকায় যারা সহিংসতা চালিয়েছেন এবং তাদের মদদদাতাদের ধরতেই এই অভিযান। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এলাকা ভাগ করে সন্দেহভাজনদের আটক করা হয়। পরে তাদের যাচাই-বাছাই করে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। 

সূত্র আরও জানায়, গত কয়েক দিনে রাজধানীর উত্তরা, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, ঢাকার বসুন্ধরা, রামপুরা, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, মহাখালী, শাহীনবাগ ও মগবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব এলাকা থেকে হাজারখানেক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সন্দেহভাজনদের কিসের ভিত্তিতে আটক করা হচ্ছে, সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুটি অংশে অভিযান চালায় পুলিশ। একাংশ অভিযান চালায় বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর নেতা-কর্মীদের ধরতে। অন্য অংশের পুলিশ কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালায়।

ব্লক রেইডের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার গতকাল বলেন, আন্দোলন ঘিরে যারা সহিংসতা চালিয়েছেন, তাদের ধরতে অভিযান চলছে। যত দিন পর্যন্ত জড়িতদের আইনের আওতায় না আনা যাবে, তত দিন অভিযান চলবে।

এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা বেশি ঘটেছে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশে। রাজধানীর উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, বাড্ডা, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মিরপুর, আজিমপুর, নীলক্ষেতসহ প্রায় পুরো রাজধানীতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। ঘটনার পর মামলা ও গ্রেপ্তারও বেশি হচ্ছে রাজধানী ও এর চারপাশে।

সর্বশেষ গত শুক্রবার উত্তরা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। অপূর্ব হাসান নামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া এক শিক্ষার্থী জানান, তারা কয়েকজন বন্ধু মেস করে বেশ কয়েক মাস ধরে একসঙ্গে থাকেন। সে রাতে পুলিশের কয়েকজন সদস্য হঠাৎ কড়া নেড়ে বাসায় প্রবেশ করেন। পরিচয়পত্র দেখার পর আন্দোলনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চান। পাশাপাশি শরীরে কোনো ক্ষতস্থান আছে কি না, তা দেখতে চান। যাওয়ার সময় নেটের লাইন কেটে দিয়ে চলে যান।

রাইড শেয়ারিং পেশায় নিয়োজিত বনশ্রীর এক বাসিন্দা জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত ১টায় তার বাসায় রেইড দেওয়া হয়। পুলিশের কয়েকজন সদস্য বাসার বাইরে রাস্তায় অবস্থান নেন। আর কয়েকজন তাদের বাসায় প্রবেশ করেন। তাদের কাছে থাকা তালিকার সঙ্গে নাম-ঠিকানা মিলিয়ে নেন। আগামী কয়েক দিন ঢাকার বাইরে থাকা আত্মীয়দের বাসায় আনতে নিরুৎসাহিত করে তারা চলে যান।

এর আগে গত ২১ জুলাই রাত থেকে রাজধানীতে চিরুনি অভিযান শুরু করে পুলিশ ও র‍্যাব। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্রেপ্তার অভিযানে ‘ব্লক রেইড’ দেওয়া হচ্ছে। সহিংসতায় কারা জড়িত ছিলেন, তা বের করতে ভিডিও ফুটেজ ও ছবি বিশ্লেষণ করে তালিকাও করা হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গতকাল শনিবার বিকেলে জানায়, গতকাল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মোট ২০৭টি মামলা হয়েছে। মোট ২ হাজার ৫৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৫২ জন।

অন্যদিকে র‍্যাব জানিয়েছে, নাশকতার অভিযোগে সাম্প্রতিক সময়ে তারা ২৯০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৭১ জন ও ঢাকার বাইরে ২১৯ জন।

ঢাকা মহানগরের বাইরে ঢাকা জেলার সাভার, ধামরাই, আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও দোহারেও চলছে গ্রেপ্তার অভিযান। জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরের বাইরে ঢাকা জেলায় গতকাল নতুন করে আরও ৪টি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে ঢাকা জেলার বিভিন্ন থানায় মোট মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪। এসব মামলায় গতকাল পর্যন্ত ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

রাজধানীর পার্শ্ববর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরেও আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। সেখানেও গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে। নারায়ণগঞ্জে গত শুক্রবার রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত আরও ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেখানে গতকাল আরও ২টি মামলা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে ২৪টি মামলা হয়েছে। মোট গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৮৭ জনকে।

গাজীপুরেও গতকাল আরেকটি নতুন মামলা হয়েছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত গাজীপুরে মামলা হয়েছে ৩৭টি। মোট গ্রেপ্তার ৩৯৬ জন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ ও নিহতের ঘটনায় চট্টগ্রাম মহানগরীতে গতকাল শনিবার নতুন আরও একটি মামলা হয়েছে। গতকাল শনিবার আকবরশাহ থানায় এই মামলা হয়। গতকাল শনিবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা মিলিয়ে মোট মামলা হয়েছে ৩০টি। গতকাল পর্যন্ত এসব মামলায় ৮৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, বগুড়া ও রংপুরে মামলা এবং গ্রেপ্তার তুলনামূলক বেশি। রংপুরে গতকাল পর্যন্ত মোট ১২টি মামলায় ১৮৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাজশাহীতে গতকাল পর্যন্ত মোট ১৭টি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৪৫ জনকে। আর বগুড়ায় মোট ১৫টি মামলায় গতকাল পর্যন্ত ২৯৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি এখন কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরও ব্লক রেইড দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আইডি কার্ড দেখামাত্রই গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, সহিংসতাকে কেন্দ্র করে চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলছে। এরই মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেককে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫