
গতকাল রবিবার (৪ আগস্ট) সারাদেশে সহিংসতায় ৯৮ জন নিহত ও বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত
গতকাল রবিবার (৪ আগস্ট) ভয়াবহ একটি দিন পার করলো বাংলাদেশ। আজ সোমবার (৫ আগস্ট) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায় ক্ষত চিহ্ন। সড়কে সড়কে পড়ে আছে আগুনে ভস্মীভূত হওয়া গাড়ি, ভাঙ্গা কাঁচ কিংবা ভাঙা ইটের স্তুপ। এরইমধ্যে সোমবার ‘মার্চ টু ঢাকা’ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অন্যদিকে দলীয় কর্মসূচি নিয়ে এ দিন মাঠে থাকবেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। এ অবস্থায় সোমবারের কর্মসূচি ঘিরে জনমনে উৎকণ্ঠা ও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নগরীর প্রত্যেকের মনে আতঙ্ক কী হতে যাচ্ছে আজ!
পুরো দেশ যেনো এক টুকরা যুদ্ধের ময়দান হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল রোববার (৪ আগস্ট)। সড়কে কোথাও পড়ে আছে ভাঙ্গা ইট, কোথাও বাঁশ, কোথাও আগুনের স্তুপ কিংবা কোথাও পড়ে আছে ধ্বংসস্তূপ।
অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে গতকাল রবিবার সারাদেশে পুলিশের ১৪ সদস্যসহ প্রাণ গেছে ৯৮ জনের। এত বেশি প্রাণহানি এবং রক্ত স্বাধীনতার পর আর দেখেনি বাংলাদেশ। এ অবস্থায় সোমবার লংমার্চ কর্মসূচি ঘিরে আরও অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে।
এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে জুলাই মাসে দেড়শ’র বেশি প্রাণহানির তথ্য জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। অন্যদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যমতে এ সংখ্যা আড়াইশোর বেশি।
এদিকে গতকাল রবিবার (৪ আগস্ট) কারফিউ প্রত্যাখ্যান করে রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এছাড়া গতকাল রবিবার বিকেলে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে লংমার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি একদিন এগিয়ে আজ সোমবার পালন হবে বলে জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।
পোস্টে তিনি লিখেন, ‘পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এক জরুরি সিদ্ধান্তে আমাদের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ৬ আগস্ট থেকে পরিবর্তন করে ৫ আগস্ট করা হলো। অর্থাৎ আগামীকালই (সোমবার) সারা দেশের ছাত্র-জনতাকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি আরও লেখেন, ‘আজ প্রায় অর্ধশতাধিক ছাত্র-জনতাকে খুন করেছে খুনি হাসিনা। চূড়ান্ত জবাব দেওয়ার সময় এসে গেছে। বিশেষ করে আশপাশের জেলাগুলো থেকে সবাই ঢাকায় আসবেন এবং যারা পারবেন আজই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে যান। ঢাকায় এসে মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা রাজপথগুলোতে অবস্থান নিন।’
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে এ সমন্বয়ক লেখেন, ‘চূড়ান্ত লড়াই, এই ছাত্র নাগরিক অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত স্বাক্ষর রাখার সময় এসে গেছে। ইতিহাসের অংশ হতে ঢাকায় আসুন সকলে। যে যেভাবে পারেন ঢাকায় কালকের মধ্যে ঢাকায় চলে আসুন। ছাত্র-জনতা এক নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটাবে।’
অন্যদিকে এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি থেকে জঙ্গি কায়দায় হামলা, সহিংসতা এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন সন্ত্রাসী ঘটনা এবং নৈরাজ্য থামাতে দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়া তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক মো. আরাফাত বলেছেন, সরকার কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা দেখতে চায় না। জান-মালের নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমন করা হবে বলেও হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।