Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ

Icon

তৌসিফ আহমেদ

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৪, ২১:৪২

বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ

বাংলাদেশ পুলিশ। ফাইল ছবি

‘পুড়ে যাওয়া ভবনটিকে দেখে বোঝা মুশকিল এটি একটি থানা। আগুনে পুড়ে দেয়ালগুলো কালো হয়ে গেছে। খালি প্রাঙ্গণের দুই পাশে পার্কিং করা ডজন খানেক গাড়ি। এসব গাড়ির কোনোটার সামনের গ্লাস ভাঙা, কোনোটা আগুনে পোড়া, আবার কোনোটার পুরো বডি ভেঙে চুরমার। বিল্ডিংয়ের সিলিং ও বারান্দার ছাদ পুড়ে চাপ চাপ কয়লার আকৃতি পেয়েছে। সব কিছুই অর্ধেকের মতো পোড়া, ব্যবহারের অনুপযুক্ত।’

গত ১১ আগস্ট কাকডাকা ভোরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মোহাম্মদপুর থানার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় এমনই দৃশ্য চোখে পড়ে। এ সময় একদল সেনা সদস্যকে থানাটির নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থানার একজন পুলিশ উপপরিদর্শক (এসআই) বলেন, ‘আমি সেদিন বিশ্রামে ছিলাম। রাতে ডিউটিতে আসি। এসেই আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি হই। পরে বাধ্য হয়ে পেছনের দেয়াল টপকে পালিয়ে যাই।’ আরেকজন পুলিশ কনস্টেবল বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের সামনে দাঁড়াতে না পেরে ইউনিফর্ম খুলে সাদা পোশাকে থানা থেকে বের হয়ে যাই।’

এর আগে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে ভারতে পলায়নের পর বিক্ষুব্ধ জনতার সব রাগ ও ক্ষোভের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় পুলিশ। আন্দোলনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, নির্বিচারে গুলি ও হত্যার কারণে দেশের প্রায় সব থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশ হত্যার ঘটনাও ঘটে। 

একযোগে সব থানা ফেলে পুলিশ সদস্যদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা অতীতে বাংলাদেশে কখনো দেখা যায়নি। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এ ধরনের ঘটনা বিরল বলে উল্লেখ করছেন বর্তমান ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু কোনো স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা নজিরবিহীন। 

পুলিশের জন্য এমন পরিস্থিতি তৈরি হলো কেন সেটি এক বড় প্রশ্ন। এর উত্তরও দিচ্ছেন পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। শেখ হাসিনার 

কর্তৃত্ববাদী সরকার দেড় দশকের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রীয় বাহিনী পুলিশকে নিজেদের পেটোয়া বাহিনীর মতো ব্যবহার করেছে। বিপক্ষ দলের মানুষদের দমন-পীড়ন, গ্রেপ্তার, গুম ও খুন করতে এই বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়েছে। বিগত তিনটি নির্বাচনেও পুলিশের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। এ ছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনে অতিরিক্ত শক্তিপ্রয়োগ ও বেপরোয়াভাবে গুলি করে মানুষ হত্যার ক্ষেত্রে অতি উৎসাহী কিছু কর্মকর্তার ভূমিকা রয়েছে। 

এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ কনস্টেবল থেকে উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ মানতে গিয়েই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে। যার ফলে পুলিশ সদস্যরাও শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর পাল্টা আক্রমণের মুখে পড়েছেন।

এ অবস্থায় বাহিনী পুনর্গঠন ও সংস্কারে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ১১ দফা দাবি জানিয়ে কর্মবিরতিতে যান পুলিশ সদস্যরা। তাদের এসব দাবির মধ্যে পুলিশি স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে অতিদ্রুত বিচারের আওতায় আনা, নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ, পুলিশের পোশাকের রং পরিবর্তন, কনস্টেবল থেকে আইজিপি পর্যন্ত একই ড্রেস কোড, শ্রম আইন অনুযায়ী পুলিশ সদস্যদের জন্য আট ঘণ্টা ডিউটির ব্যবস্থা, পুলিশের নিয়োগ বিধিমালা সংস্কার ও নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিতসহ আরও বেশ কিছু দাবি রয়েছে। 

এ নিয়ে ১১ আগস্ট পুলিশ ও র‌্যাব প্রধানের উপস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের বৈঠক হয়। যেখানে একটি পুলিশ বাহিনীর জন্য স্বাধীন কমিশন গড়ে তোলার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সবাই। বৈঠক ফলপ্রসূ হওয়ায় পুলিশের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ক পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম ও কনস্টেবল শোয়েবুর রহমান। 

এখন জরুরি কাজ হচ্ছে, পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের কর্মস্থলে ফেরানো। একই সঙ্গে বাহিনীর শীর্ষ পদগুলোতে সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিদের বসানো, কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা, পদোন্নতি ও পদায়নের স্বচ্ছ নীতিমালা তৈরি ও কার্যকর এবং নিচের সারির সদস্যদের ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। 

দেশে পুলিশবিহীন কয়দিনে বোঝা গেছে, সমাজে তাদের গুরুত্ব কতটা। তাই এই বাহিনীকে জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার দিকেই সবচেয়ে মনোযোগ দিতে হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫