এস আলম গ্রুপের ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগের তদন্ত শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৪, ১১:০১

দেশজুড়ে ব্যাপকভাবে সমালোচিত এস আলম শিল্পগোষ্ঠীর ১৮টি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকির তদন্ত হচ্ছে। ফাইল ছবি
দেশজুড়ে ব্যাপকভাবে সমালোচিত এস আলম শিল্পগোষ্ঠীর ১৮টি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকির তদন্ত হচ্ছে। এ জন্য গতকাল মঙ্গলবার (২১ আগস্ট) একটি তদন্ত দল গঠন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। তদন্ত দলকে আগামী এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সূত্রে জানা গেছে, ভ্যাট ফাঁকির তদন্তে চট্টগ্রামের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট গতকাল একটি দল গঠন করেছে। তদন্ত দল এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে।
চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ভ্যাট ফাঁকি তদন্ত করতে এসব প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা করা হবে। এই শিল্পগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকের প্রকৃত তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা ছিল। এখন আর সেই বাধা নেই। তাই ভ্যাট ফাঁকির ঘটনা থাকলে তা বেরিয়ে আসবে।
এস আলম শিল্পগোষ্ঠীর যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির তদন্ত হবে সেগুলো হচ্ছে এস আলম স্টিল লিমিটেড (ইউনিট-১), এস আলম স্টিল লি. (ইউনিট-২), এস আলম স্টিল লি. (ইউনিট-৩), চেমন ইস্পাত লিমিটেড, নিউ এস আলম শুজ অ্যান্ড বার্মিজ, এস আলম রিফাইন্ড সুগার, এসএস পাওয়ার লিমিটেড, অটোবোর্টস অটোমোবাইলস, প্লাটিনাম স্পিনিং মিলস লিমিটেড, এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড, এস আলম প্রপার্টিজ লিমিটেড, এস আলম কোল্ড রি-রোলিং মিলস, সাইনিং এসসেন্ট লিমিটেড, গ্র্যান্ড স্পিনিং মিলস লিমিটেড, মাসুদ প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, ইনফিনিটি সি আর স্ট্রিপ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এস আলম ব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং মিলস লিমিটেড এবং ওশান রিসোর্ট লিমিটেড।
চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের সদ্য গঠিত ২০ সদস্যবিশিষ্ট দলটিকে আগের নিরীক্ষা থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত আয়-ব্যয়সহ যাবতীয় ব্যবসায়িক তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি নিরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত জুন মাসে এস আলম গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছেন ভ্যাট কর্মকর্তারা। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো চট্টগ্রামের এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড এবং এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড।
ভ্যাট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে পরের তিন বছর পণ্য বিক্রির তথ্য গোপন করে প্রতিষ্ঠান দুটি। রিটার্নে কম বিক্রি দেখিয়ে তারা ভ্যাট ফাঁকি দেয়। আবার ভোজ্যতেল উৎপাদনের উপকরণ কেনায়ও ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে এস আলম ভেজিটেবল অয়েলের ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ ১ হাজার ৯১১ কোটি টাকা এবং এস আলম সুপার এডিবল অয়েলের ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলছে।
ইতিমধ্যে এস আলম ও তাঁর পরিবারের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। কর অঞ্চল-১৫ থেকে সাইফুল আলম, তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীন, মা চেমন আরা বেগম ও ভাই আবদুল্লাহ হাসানের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে।
পাশাপাশি তাদের মা-বাবা, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে বা বোনের যৌথ নামে অথবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবের তথ্যও তলব করা হয়েছে। কার্যত এস আলমসহ তাঁর পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যের সব ব্যাংক হিসাবের তথ্যই চেয়ে পাঠিয়েছে এনবিআর।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সাইফুল আলম মূলত এস আলম নামেই বেশি পরিচিত। তিনি বেশির ভাগ সময় বিদেশে অবস্থান করেন। অভিযোগ রয়েছে, তার পক্ষে পরিবারের সদস্যরা সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক অপরাধ করেছিলেন।