Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

বাংলাদেশের নাগরিকদের মাথাপিছু যত ঋণ

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ১০:০২

 বাংলাদেশের নাগরিকদের মাথাপিছু যত ঋণ

ফাইল ছবি

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ঋণ রয়েছে ১৮ লাখ কোটি টাকার বেশি। আর এই টাকা শোধ করবে সরকার। আর সরকারের টাকার উৎস জনগণ। ফলে জনগণের মাথার উপর রয়েছে এই ঋণ বোঝা। জীবীত ও সদ্য জন্ম নেয়া কেউ এই ঋণের বাইরে নয়।   সেই হিসেবে দেশের প্রতিটি মানুষের সবার মাথায় এখন ঋণের বোঝা লাখ টাকার বেশি। 

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে। 

অর্থ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ৩০ জুন পর্যন্ত স্থানীয় মুদ্রায় দেশের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া হয়েছে ১০ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি এবং বাকি প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ।

জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই মানুষের উপর বিপুল অঙ্কের এই ঋণের বোঝার ভার বেড়েছে বেশি। ২০০৮ সালে এই সরকার ক্ষমতায় আসার সময় এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৩ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। দেশ ও ক্ষমতা ছাড়ার আগে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ১৫৬ বিলিয়ন ডলার ঋণের বোঝা রেখে গেছেন তিনি। অর্থাৎ আওয়ামী সরকারের আমলে ১৫ বছরে ঋণ বেড়েছে প্রায় ১২২ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার।

সাধারণত বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার দেশ-বিদেশ থেকে যে ঋণ নেয়, তা দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে করের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করে শোধ করতে হয়। এই ঋণ জনগণকে প্রত্যক্ষভাবে চাপে না ফেললেও পরোক্ষভাবে ফেলে। কারণ, ঋণ শোধে সরকার ভ্যাট কর বাড়িয়ে দেয়। এতে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়।

বিবিএসের জনশুমারি ও গৃহগণনার সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজারে। সেখানে বর্তমানে দেশের মোট ঋণ ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসেবে স্থিতি ঋণের সঙ্গে দেশের মোট জনসংখ্যা ভাগ দিলে মাথাপিছু ঋণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৬ হাজার ৯৯৯ টাকা। অর্থাৎ সরকারের নেওয়া ঋণের কারণে প্রত্যেক নাগরিকের মাথায় প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার টাকা ঋণ রয়েছে। বাদ থাকবে না আজ জন্ম নেওয়া শিশুটিও।

বছরের ব্যবধানে বেড়েছে মাথাপিছু ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৩ সালের জুনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সময় অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি মিলিয়ে সরকারের মোট ঋণ ছিল ১৬ লাখ ১৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। তখন মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১। সে হিসেবে গত বছর মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৫ হাজার ১৯ টাকা। অর্থাৎ সরকারি ঋণের বিপরীতে বছরের ব্যবধানে মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ৯৮০ টাকা।

এ ছাড়া বিবিএসের খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, পরিবারের খরচ মেটাতে একজন ব্যক্তি গড়ে ১৭ হাজার ৩৬৬ টাকা ঋণ নেন। সে হিসেবে সরকারের মাথাপিছু ঋণ এবং ব্যক্তিগত গড় ঋণ একত্রে হিসাব করা হলে একজন ব্যক্তির গড় ঋণ দাঁড়ায় ১ লাখ ২৪ হাজার ৩৬৫ টাকা।

এদিকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে সরকারের পুঞ্জীভূত বিদেশি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৯০ কোটি ডলার। সে হিসেবে বর্তমানে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের মাথার ওপর গড়ে ৪০০ ডলারের মতো বিদেশি ঋণ রয়েছে, যা দেশীয় মুদ্রায় ৪৭ হাজার ২০০ টাকা।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ঋণের টাকার প্রকল্পগুলো বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে উল্লেখ করে জাহিদ হোসেন বলেন, সরকার এমন কিছু প্রকল্পের বিপরীতে ঋণ নিয়েছে, যেগুলো এখনো শেষ হয়নি, কোনোটা মাঝপথে বা কোনোটা শুরুর দিকে আছে। এখন প্রশ্ন হলো, এই প্রকল্পগুলো নিয়ে আমরা আর এগোব কি না। ক্ষতির পরিমাণ বেশি হলে এগুলো নিয়ে এগোনো উচিত হবে না। অতীতে যা হয়েছে, তা গেছে। যা খরচ হয়ে গেছে, তা তো আর ফেরত আসবে না। কিন্তু এমন কিছু প্রকল্প থাকে, যা এখন বাস্তবায়নে অতিরিক্ত ব্যয় হলেও ভবিষ্যতে লাভ বেশি হবে। সেগুলো চালু রাখতে হবে। অর্থাৎ যেগুলো বোঝা বাড়াবে, সেগুলো কমাতে হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫