
চাকুরী জাতীয়করণ ও অন্যান্য দাবিতে রাস্তায় নেমেছে আনসার সদস্যরা। । ছবি: সংগৃহীত
চাকুরী জাতীয়করণ ও অন্যান্য দাবিতে রাস্তায় নেমেছে আনসার সদস্যরা। গত বৃহস্পতিবার থেকে টানা চারদিন ধরে তারা রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তাদের দাবি দ্রুত মেনে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর এই সদস্যরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী দৈনিক ৫৪০ টাকা চুক্তিতে কাজ করেন। এছাড়া বাহিনীর পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের জন্য রেশন সুবিধা বরাদ্দ থাকে। তারা এখন স্থায়ী নিয়োগ চান।
কোনো প্রতিষ্ঠান যদি মনে করেন, তাদের নিরাপত্তায় তাৎক্ষণিক সাড়া দেওয়ার জন্য জনবল প্রয়োজন, তাহলে তারা নির্দিষ্ট সংখ্যক জনবল চেয়ে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদরদপ্তরে আবেদন করেন।
পরে ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সদস্যদের থাকা-খাওয়া ও অস্ত্র রাখার জায়গা থাকা এবং দুই মাসের অগ্রিম বেতন দেওয়া সাপেক্ষে নির্ধারিত সংখ্যক সদস্যকে তিন বছরের জন্য সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এমন আনসার সদস্যের সংখ্যা সারাদেশে প্রায় ৭০ হাজার। এরমধ্যে প্রায় ৫৫ হাজার সদস্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন, যাদেরকে দৈনিক ৫৪০ টাকা হারে বেতন দেয় সংশ্লিষ্ট ওই প্রতিষ্ঠান।
বাকি ১৫ হাজার সদস্য ‘রেস্ট টাইমে’ থাকেন। কোনো প্রতিষ্ঠানের নতুন চাহিদা পেলে কিংবা আগের কোনো প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বরত সদস্যদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে ‘রেস্টে’ থাকা সদস্যদের পাঠানো হয়। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে বিভিন্ন দায়িত্বেও পাঠানো হয় ‘রেস্টে’ থাকা সদস্যদেরকে।
গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর পর পুলিশবিহীন সড়কে ট্রাফিক সামলানো এবং থানার নিরাপত্তার দায়িত্বে পাঠানো হয়েছিল আনসার সদস্যদের।
আনসারের এই সদস্যদের ‘স্বেচ্ছাসেবী’ হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে প্রশিক্ষণ দেওয়া মানেই চাকরি নয়। প্রশিক্ষণ শেষে বাহিনীর পক্ষ থেকে একটি স্মার্টকার্ড দেওয়া হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানের চাহিদার প্রেক্ষিতে তাদের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্বে পাঠানো হয়।
চাকরি জাতীয়করণ চেয়ে আন্দোলনে নামা আনসারদের কিছু দাবি ‘যৌক্তিক’ মেনে নিয়ে গতকাল শনিবার (২৪ আগস্ট) তাদের কর্মস্থলে ফিরে কাজে যোগদানের আহ্বান জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালকের নেতৃত্বে কমিটি করা হয়েছে, সেই কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ দাবির বিষয়ে একটি ‘যৌক্তিক সমাধান’ হবে।
এই কমিটি দাবি-দাওয়া পর্যালোচনা করে যৌক্তিক সুপারিশ করে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। পরে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি সেই সুপারিশ পরীক্ষা করে কর্মপন্থা নির্ধারণ করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেবে।
আনসারদের দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা অবহিত হয়েছেন জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাধারণ আনসারদের উত্থাপিত দাবি-দাওয়াসমূহ সরকার গভীর মনোযোগ ও সহানুভূতির সাথে পর্যালোচনা করেছে। প্রাথমিকভাবে কিছু দাবি যৌক্তিক প্রতীয়মান হয়েছে।
সাধারণ আনসার হিসেবে নতুন কোনো নিয়োগ দেওয়া হবে না বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আর তিন বছর চাকরির পর সাধারণ আনসারদের বিশ্রাম না দিয়ে চাকরি অব্যাহত রাখার বিষয়টি পরীক্ষা করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে ।
আশ্বাসের পাশাপাশি হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে। ‘মুষ্টিমেয় কয়েজন উসকানিদাতা’ এই সুশৃঙ্খল বাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে মন্তব্য করে মন্ত্রণালয় বলেছে, সরকার প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দ্বিধা করবে না।
এদিকে আজ রবিবারও (২৫ আগস্ট) প্রেসক্লাবের সামনে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মত রাস্তায় নেমেছেন আনসার সদস্যরা। সমাবেশে আনসার কমান্ডার শাহাবুদ্দিন বলেন, আমাদের দাবি একটাই এক দফা… সেটা হল আনসারদের চাকরি জাতীয়করণ। আমাদের এই ন্যায্য দাবি বিগত সরকার মানেনি, আমরা অন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে এই দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছি।
সেলিম নামের এক আনসার সদস্য বলেন, স্বৈরাচার সরকারের যখন পতন হয়েছিল, তাদের দোসর পুলিশ, র্যাবরা যখন পালিয়ে ছিল, তখন আমরাই জনগণের নিরাপত্তা বিধানে রাস্তায় ছিলাম। এখন আমাদেরকে অবহেলা করা হচ্ছে। আমাদের ন্যায়সঙ্গত দাবিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। আমরা আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না… এটা আমাদের সংকল্প।