আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের জঙ্গি ও মাদকাসক্ত ট্যাগ দেন আরাফাত

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ২০:২৪

মোহাম্মদ আলী আরাফাত। ছবি: সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও মাদকাসক্ত আখ্যা দিয়ে বিতর্কিত ও সমালোচিত হয়েছিলেন পদচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রিসভার তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
আজ মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এর আগে গত ২২ জুলাই সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাত বলেছিলেন, 'আপনারা টেলিভিশনে দেখেছেন ওদের চেহারা, এপ্রোচ, এক্সপ্রেশন, ড্রেসআপ! কোথাও আপনাদের মনে হয়েছিল কোমলমতি ছাত্র এরা? পুরো বুঝা যাচ্ছে এটা একটা জঙ্গি দল। আসছে, আক্রমণ করছে আর চলে যাচ্ছে। এবং এই ধরণের প্রমাণও পাওয়া গেছে, অনেককে ড্রাগ দেওয়া হয়েছে। এজন্য তারা বুক পেতে পুলিশের সামনে চলে আসে।'
এর আগে কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগের হয়ে নানা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত ছিলেন আরাফাত। টকশোতে আওয়ামী লীগ ও সরকারের পক্ষে কথা বলেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রথমবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য হন তিনি।
গত বছরের জুলাইয়ে ঢাকার ‘অভিজাত এলাকা’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
পরে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়ে শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রিসভায় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মোহাম্মাদ এ আরাফাত।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর অন্যান্য আওয়ামী নেতার মতোই আত্মগোপনে ছিলেন আরাফাত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নির্বিচারে সাধারণ মানুষ হত্যার অভিযোগের বিভিন্ন মামলার আসামি তিনি।
মোহাম্মাদ এ আরাফাতের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগসমূহ:
হিরো আলমের ওপর হামলা: ২০২৩ জুলাইয়ের উপ-নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন হিরো আলম। নির্বাচনে প্রচারণা চালানোর সময় হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। মোহাম্মদ আলী আরাফাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। হিরো আলমের দাবি ছিল, আরাফাতের নির্দেশেই তার ওপর হামলা করা হয়েছিল।
সেই নির্বাচনে ভোট পড়ে ১১ শতাংশের কিছু বেশি। প্রদত্ত ভোটের সিংগভাগই পান আরাফাত। যে ৩৭ হাজার ৩৭ জন ভোটার কেন্দ্রে এসেছেন, তার মধ্যে ২৮ হাজার ৮১৬ জনই রায় দিয়েছেন তার পক্ষে। হিরো আলমের পক্ষে ছিলেন ৫ হাজার ৬০৯ জন। নির্বাচনে জয় পরাজয়ের চেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে অবশ্য ভোটের শেষভাগে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনা, যার প্রতিক্রিয়া এসেছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং বিএনপির পক্ষ থেকেও।
যাত্রাবাড়ীতে ফল ব্যবসায়ী হত্যা: রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজায় ফলের দোকানদার ফরিদ শেখ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনার পাশাপাশি আসামি আরাফাত। ২০ আগস্ট ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহমেদের আদালতে মামলা করেন নিহতের বাবা সুলতান মিয়া।
১২ বছরের এক শিশু হত্যা: কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় হেলিকপ্টার থেকে র্যাবের গুলিতে ১২ বছরের এক শিশুকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের সাথে মামলার আসামি মোহাম্মাদ এ আরাফাত। আসামিদের নির্দেশে র্যাব সদস্যরা হেলিকপ্টার থেকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এ সময় ভুক্তভোগী জোবাইদ হোসেন ইমনের বাঁ কানের ওপর দিয়ে গুলি প্রবেশ করে ডান কানের নিচ দিয়ে চোয়াল ভেদ করে বেরিয়ে যায়।
চিটাগাং রোডে মেহেদী হত্যা: ২০ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে চিটাগাং রোডের হিরাঝিল এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নির্বিচার গুলিবর্ষণে মেহেদী মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রেক্ষিতে অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগের অন্যতম আসামি মোহাম্মাদ এ আরাফাত।
যাত্রাবাড়ীতে সাংবাদিক হত্যা: যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর কাজলা টোল প্লাজার পশ্চিম পাশে দাঁড়িয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ‘ঢাকা টাইমসের’ সাংবাদিক মেহেদী হাসানের মৃত্যু হয়। দায়ের করা মামলার আসামি আসামি আরাফাত।
হাতিরঝিলে অটোরিকশাচালক হত্যা: হাতিরঝিলে অটোরিকশাচালক বাবু মোল্লাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যা মামলায় শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন আ্ওয়ামী নেতার পাশাপাশি আসামি মোহাম্মাদ এ আরাফাত।
নির্বিচারে মানুষ হত্যার সমর্থনকারী ও হত্যার নির্দেশদাতে হিসেবে আরও অসংখ্য মামলার আসামি সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।