প্রতীকী ছবি
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে একাধিক দল রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দুটি দলের মধ্যে বিরোধ ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে রাষ্ট্র পরিচালনা করা প্রতিটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটি জায়গায় দ্বিমত লক্ষ করা যায়নি, তা হলো ন্যায়পালকে ফিরিয়ে আনা। এই ন্যায়পাল (Ombudsman) বলতে এখানে পাল বংশের মহীপালের প্রথম পুত্র ন্যায়পালের কথা বলা হচ্ছে না। এই ন্যায়পাল বলতে ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদে যেই ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল সে বিষয়ে বলা হচ্ছে।
যদিও প্রতিটি সরকার তাদের স্বার্থে সংবিধানের দোহাই দিয়েছে। সংবিধানের মধ্য থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার কথা বলে গলা ফাটিয়েছে; কিন্তু ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সবাই ছিল উদাসীন।
সংবিধানের ৭৭(১) অনুচ্ছেদে ন্যায়পালের পদ ও প্রতিষ্ঠার বিধান রয়েছে। ৭৭(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে ন্যায়পালকে মন্ত্রণালয়, সরকারি কর্মচারী বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের যে কোনো কাজ সম্পর্কে তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতাসহ দায়িত্ব প্রদানের কথা বলা হয়েছে।
৭৭(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে ন্যায়পাল তার দায়িত্ব পালন সম্পর্কে বার্ষিক রিপোর্ট প্রণয়ন করিবেন এবং অনুরূপ রিপোর্ট সংসদে উপস্থাপিত হবে সেই সম্পর্কে বলা হয়েছে। সংবিধানে ন্যায়পাল থাকলেও স্বাধীনতার এত বছর পার হলেও ন্যায়পাল নিয়োগ হয়নি। এতে পুরোপুরি উপেক্ষিত হয়েছে সাংবিধানিক এই বাধ্যবাধকতা। যদিও ১৯৮০ সালে এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু সেটি কার্যকর হয়নি অদ্যাবধি।
ন্যায়পাল আইন অনুযায়ী, কোনো অভিযোগ পেলে সরকারের যে কোনো দপ্তরে থেকে যে কোনো সময় প্রয়োজনীয় তথ্য চাইতে পারে ন্যায়পাল অফিস। যখন যে অবস্থায় চাইবে ঠিক সেই অবস্থাতেই তথ্য দিতে বাধ্য থাকবে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর। প্রয়োজন মনে করলে সরকারের যে কোনো দপ্তরে সরেজমিন গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষমতা থাকে ন্যায়পাল অফিসের। এ বিষয়ে অন্য কোনো আইনের দোহাই দিয়ে তথ্য গোপন রাখার সুযোগ নেই। কিন্তু আমাদের দেশের আমলারা এত শক্তিশালী যে, তারা নিজেদের ওপর কারও খবরদারি সহ্য করেন না। আর এ কারণেই ন্যায়পাল নিয়োগে উদ্যোগ নেয়নি স্বাধীন দেশের কোনো সরকার।
এ ছাড়া ন্যায়পালের কোনো পদক্ষেপের বিপরীতে আদালতে মামলা করা যায় না, এমনকি কোনো আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন না। ন্যায়পাল নিয়োগ হলে সরকারি কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ ও দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা যেত। এতে কোনো সরকার স্বৈরতান্ত্রিক উপায়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করার সুযোগ পেত না। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে সেটা উপেক্ষিত থেকেছে। তবে এখন গণ-আন্দোলনে স্বৈরতান্ত্রিক উপায়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করে আসা সরকারের পতন হয়েছে। চারদিকে শোনা যাচ্ছে রাষ্ট্র সংস্কারের কথা। এই সংস্কারের হাত ধরে যদি ন্যায়পাল ফিরে আসে মন্দ কী!
