Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের আইনি গুরুত্ব

Icon

লোকমান হাওলাদার

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:৫৩

বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের আইনি গুরুত্ব

প্রতীকী ছবি

ঢাকার একটি বেসরকারি অফিসে কাজ করা জামাল ও মেহেরুবা একে অন্যকে গভীরভাবে ভালোবাসেন। ভালোবাসাকে বাস্তবে রূপ দিতে পরিবারের অমতে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের ধারণা ছিল কোর্টে উকিলের মাধ্যমে বিয়ে করলে ভালো হবে। এক শ্রেণির উকিলও এ কাজে সহায়তা করে থাকে। আদালতের নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে গিয়ে তারা কোর্ট ম্যারেজ করেন। কিন্তু তখনো তারা বিয়ের কাবিন রেজিস্ট্রি করেননি। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই জামাল ও মেহেরুবার দাম্পত্য জীবনে কলহ শুরু হয়। দুজন পৃথক থাকতে শুরু করেন। 

এক সময় জামাল মেহেরুবার সঙ্গে বিয়ের কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেন। আর এ অজুহাতে মেহেরুবাকে মোহরানা, খোরপোষ ও দাম্পত্য অধিকার দিতেও তিনি রাজি নন। তারপর বিষয়টি গড়ায় আদালতে। তাদের বিয়ে প্রমাণ করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় মেহেরুবাকে।

মেহেরুবা ধারণা করেছেন কাবিন রেজিস্ট্রির পরিবর্তে কোর্ট ম্যারেজ অধিকতর শক্তিশালী। কিন্তু তার মতো এ ভুল ধারণার ফাঁদে পড়ে অনেক নারী তাদের দাম্পত্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে কোর্ট ম্যারেজের কোনো বৈধতা নেই, এমনকি এর কোনো অস্তিত্বও নেই। ২০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে কিংবা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ে গিয়ে হলফনামা করাকে বিয়ে বলে অভিহিত করা হয়। এফিডেভিট বা হলফনামা শুধুই একটি ঘোষণাপত্র। আইনানুযায়ী কাবিন রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করেই কেবল ঘোষণার জন্য এফিডেভিট করা যাবে। যা-ই হোক ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান অনুযায়ী প্রতিটি মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক। বিবাহ রেজিস্ট্রি না করলে স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকার, মৃতের সন্তানদের উত্তরাধিকার, খোরপোষ ও মোহরানার অধিকার থেকে ওই নারীকে বঞ্চিত হতে হয়। এ ছাড়া স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলে বা প্রথম স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে বিয়ের উদ্যোগ নিলে স্ত্রী আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন যদি বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়। সুতরাং বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে একজন নারী তার দাম্পত্য জীবনের অনেক জটিলতা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন এবং অসহায়ত্ব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন।

১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইনে (সংশোধিত ৮ মার্চ, ২০০৫) বলা হয়েছে, যদি কেউ বিবাহ রেজিস্ট্রি না করেন তাহলে তিনি এ আইনের অধীনে অপরাধ করেছেন বলে বিবেচিত হবেন এবং এ অপরাধের জন্য আইন কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি হচ্ছে দুই বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা আর্থিক জরিমানা, যা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে অথবা উভয় ধরনের শাস্তিই হতে পারে।

বিয়ে রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে সরকারের নির্ধারিত ফরমে লিখিত বর ও কনের বিয়েসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি সম্পর্কে আইনগত দলিল যা কাজী অফিসে সংরক্ষিত থাকে। সরকার কাজিদের বিয়ে রেজিস্ট্রি করার জন্য অনুমতি বা লাইসেন্স দিয়ে থাকেন। আইনানুযায়ী বিয়ের আসরেই রেজিস্ট্রি করতে হয়। বিয়ের আসরে সম্ভব না হলে বিবাহ অনুষ্ঠানের দিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে হয়। কাজিকে বাড়িতে ডেকে এনে অথবা কাজি অফিসে গিয়ে বিবাহ রেজিস্ট্রি করা যায়। এ ছাড়া কাবিননামার সব কলাম পূরণ করার পর বর, কনে, উকিল, সাক্ষী ও অন্য ব্যক্তিদের স্বাক্ষর দিতে হয়। ইসলাম ধর্মে বিবাহ নিবন্ধন আইন থাকলেও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে বিবাহ নিবন্ধনের বিধান ঐচ্ছিক রেখে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন তৈরি হওয়ায় অনেক জটিলতা রয়েছে। বর্তমানে বিদেশ ভ্রমণ, অভিবাসন, চাকরি বদলি ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিবাহ সম্পর্কিত দালিলিক প্রমাণ একটি অপরিহার্য বিষয়। প্রতারণার সুযোগ বন্ধ করা এবং হিন্দু নারীদের সামাজিক ও আইনি সুরক্ষা সৃষ্টির লক্ষ্যে হিন্দু বিবাহ আইন ঐচ্ছিক না রেখে বাধ্যতামূলক করা সময়ের দাবি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫