Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদন

বাংলাদেশে ঢুকেছে ১৪ হাজার, অপেক্ষায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:৫৫

বাংলাদেশে ঢুকেছে ১৪ হাজার, অপেক্ষায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা

বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় মিনারমারের ৭০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, রাখাইনে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এবং আরাকান আর্মির সংঘাতের কারণে গত ৮-৯ দিনে ১৪ হাজারের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। কমপক্ষে ৩০টি পয়েন্ট দিয়ে তারা প্রবেশ করছে। মংডু এলাকা থেকে আসা রোহিঙ্গারা প্রবেশ করছে বেশি৷ আর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নোম্যানস ল্যান্ডে কমপক্ষে আরো ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আছেন বলে জানা গেছে। যার সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। 

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, গত ৮-৯ দিনে কমপক্ষে ১৩-১৪ হাজার নতুন রোহিঙ্গা  টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নিয়েছে। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য মংডু সীমান্তে জড়ো হয়েছে আরো ৬০-৭০ হাজার রোহিঙ্গা। নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর কড়া নজরদারির মধ্যেও নানা কৌশলে তারা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে। এক শ্রেনির দালালও তাদের অর্থের বিমিয়ে ঢুকতে সহায়তা করছে।

রোহিঙ্গাদের ৯ নাম্বার ক্যাম্পের এক নাম্বার ব্লকের হেড মাঝি মোহাম্মদ হোসেন বলেন, প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা আসছেন। তারা নাফ নদীর পাশাপাশি অন্য সীমান্ত থেকেও আসছেন। স্থানীয় কিছু লোকজন তাদের বাংলাদেশে প্রবেশে সহায়তা করছে।  তারা যে সবাই ক্যাম্পে আসছেন, তা নয়। ক্যাম্পের বাইরেও তারা অবস্থান করছেন।

তার কথা, মংডুতে এখন যে তীব্র সংঘাত হচ্ছে, তাতে রোহিঙ্গারা আর সেখানে টিকতে পারছেন না। তারা মিয়ানমারের সামরিক জাস্তা এবং আরাকান আর্মি উভয়ের হামলা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ যদি পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারে, তাহলে এই দফায় আরো এক লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা আছে।

কক্সবাজারে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা নয়ন  বলেন, প্রতিদিনই ক্যাম্পে নতুন রোহিঙ্গা দেখা যাচ্ছে। এটা স্পষ্ট যে, সীমান্ত থেকে নতুন করে রোহিঙ্গারা ঢুকছে। তবে আমরা তাদের কোনো তালিকা করা এখনো শুরু করিনি। সরকারের কাছ থেকে আমরা এখনো এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা পাইনি।

মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. শহীদুল হক বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে না পারলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। এমনিতেই তারা নানা সংকট তৈরি করছে ক্যাম্পে। সেখানে মাদক, অস্ত্র ব্যবসা হচ্ছে। নানা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আশ্রয় নিচ্ছে।

তার কথা, এখনই এই সমস্যা সমাধানের হাইটাইম। সরকারের উচিত কূটনৈতিক তৎপরতাআরো জোরদার করা। আমরা আর কোনোভাবেই নতুন রোহিঙ্গা নিতে পারবো না।

আরেক সাবেক কূটনীতিক ও কসোভোতে সাবেক ইউএন আঞ্চলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এস এম রাশেদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশনে আশা করি প্রধান উপদেষ্টা  অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা ইস্যুটি শক্তভাবে তুলে ধরবেন। তার একটি গ্রহণযোগ্যতা আছে। আশা করি, তার প্রচেষ্টায় কাজ হবে।

তিনি আরও বলেন, আসলে এখনই সময় কূটনেতিক প্রচেষ্টা জোরদার করে এই সমস্যা সমাধানের। রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবসনই একমাত্র সমাধান। আর কোনো সমাধান নাই। প্রয়োজনে আমাদের আরাকান আর্মির সাথে ভিন্ন চ্যানেলে কথা বলতে হবে। আর আমাদের  কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সাথে দৃশ্যমান শক্তি দেখাতে হবে। একটি দেশে সীমান্তের ওপার তো নন-স্টেট অ্যাক্টরদের দখলে থাকতে পারে না। 

এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সম্প্রতি বাংলাদেশে নতুন করে আট হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কথা জানান। তিনি জানান,  এটা কীভাবে ঠেকানো যায়, সেটা আমাদের চেষ্টা করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, নীতিগতভাবে আমরা কোনো রোহিঙ্গাকে নতুন করে আশ্রয় দেবো না, যদিও দুঃখ লাগে কথাটা বলতে, কিন্তু আমাদের জন্য সাধ্যের অতীত, আর পারবো না তাদের আশ্রয় দিতে।

অন্যদিকে কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা ইউনুস আরমান জানিয়েছেন, রাখাইন রাজ্যের মংডুতে চলমান যুদ্ধ তীব্র হচ্ছে। মংডু টাউনে থাকা সেনা ও বিজিপির দুটি ব্যারাক (ব্যাটালিয়ন) দখলের জন্য মরিয়া আরাকান আর্মি। গোলাগুলির পাশাপাশি দুই পক্ষ থেকে ছোঁড়া হচ্ছে মর্টার শেল, গ্রেনেড-বোমা। মাঝেমধ্যে ড্রোন হামলাও চালানো হচ্ছে।

টেকনাফের সাবেক কাউন্সিলর নুরুল বাসার বলেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর কয়েকদিন সীমান্ত থেকে রোহিঙ্গারা ব্যাপকভাবে ঢুকেছে। এখনো বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ঢুকছে। এরকম কমপক্ষে ৩০টি পয়েন্ট থেকে তাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত আছে।

তিনি আরো বলেন, দালালরা তাদের ঢুকতে সহায়তা করছে। যারা ঢুকছে, তারা প্রথমে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছে। এরপর  যাদের ক্যাম্পে আগে আসা আত্মীয়-স্বজন আছে, তাদের মাধ্যমে ক্যাম্পে আশ্রয় নিচ্ছে।

নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে আমরা আতঙ্কে আছি বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমনিতেই আমরা এখন বাংলাদেশিরা এখানে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছি, এরকম চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫