Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

সন্তান দত্তক নেওয়ার আইনি জটিলতা

Icon

লোকমান হাওলাদার

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:১৪

সন্তান দত্তক নেওয়ার আইনি জটিলতা

প্রতীকী ছবি

মা-বাবা হওয়ার অনুভূতি যেন এক স্বর্গীয় সুখ। তবে বাংলাদেশে নিঃসন্তান অনেক দম্পতি আছেন। তাদের অনেকে মা-বাবা হওয়ার ইচ্ছা থেকে শিশু দত্তক নিতে চান। এরা এই প্রক্রিয়ায় অসংখ্য গৃহহীন শিশু নতুন মা-বাবা ও আশ্রয় খুঁজে পায়। তবে ইচ্ছা থাকলেও অনেকে আইনি জটিলতার কারণে দত্তক নিতে পারেন না। শিশু দত্তকসংক্রান্ত আইনের সুনির্দিষ্ট এমন কোনো বিধান বাংলাদেশে নেই, যাতে একটি শিশু পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে বিবেচিত হয় এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হিসেবে স্বীকৃতি পায়। মুসলিম আইনে সন্তান দত্তক নিয়ে পিতৃত্ব-মাতৃত্বের পরিচয় দেওয়ার কোনো বিধান নেই। তবে অভিভাবকত্ব অর্জন করলে শিশুকে নিজের জিম্মায় রাখা যায়। এটি পুরোপুরি মাতৃত্ব-পিতৃত্ব নয়। 

১৯৮৫ সালের পারিবারিক আইনের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি অভিভাবক হিসেবে একটি শিশুর দায়িত্ব নিতে পারেন। সেটা অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিতে হবে। ১৮৭৫ সালের মাইনরিটি অ্যাক্টের ৩ ধারা অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুর জন্য ১৮৯০ সালের অভিভাবকত্ব ও পোষ্য (গার্ডিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট) আইনের ৭ ধারায় কাস্টডি নেওয়া সম্ভব। সেটা নিতে চাইলে ১৯৮৫ সালের ফ্যামিলি কোর্ট অর্ডিন্যান্সের এখতিয়ারভুক্ত পারিবারিক আদালতে আবেদন করতে হবে। কোনো শিশুর অভিভাবকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়াটি জটিল। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে আদালত রায় দেন। 

গার্ডিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট ১৮৯০ অনুসারে কোনো দম্পতি চাইলে শিশুর অভিভাবকত্ব অর্জন করতে পারেন। সেটা মাতা বা পিতা হিসেবে নয়, একজন অভিভাবক হিসেবে। তাই অভিভাবকত্ব আর দত্তক-এক বিষয় নয়। গার্ডিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট ১৮৯০ অনুসারে শুধু বাংলাদেশি নাগরিকরা কোনো শিশুর অভিভাবকত্ব নিতে পারবেন। এদিকে কোনো দম্পতি কোনো শিশুর অভিভাবকত্ব নিলেও তাদের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী বিবেচিত হবেন না। মুসলিম আইনে দত্তক সন্তান সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারেন না। তবে বিকল্প ব্যবস্থাও আছে। মুসলিম আইন অনুযায়ী উইলকে বলে অছিয়ত। সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক কোনো মুসলমান তার অনাত্মীয়কে অর্থাৎ যিনি তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবেন না, তাকে সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত অছিয়ত করতে পারেন।

এদিকে হিন্দু আইনে পুত্র সন্তানের ক্ষেত্রে দত্তকের বিষয়টি আইনসিদ্ধ। আইনের অধীন শুধু ছেলেশিশু দত্তক নেওয়া যাবে। হিন্দু পুরুষ বিবাহিত, অবিবাহিত বা বিপত্নীক, যা-ই হোক না কেন, দত্তক নিতে পারবেন। তবে নারীদের ক্ষেত্রে এই অধিকার সীমিত। একজন অবিবাহিত নারী সন্তান দত্তক নিতে পারেন না। বিবাহিত নারীর ক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতি দরকার। এমনকি বিধবা হিন্দু নারী সন্তান দত্তক নিতে চাইলে তাকে স্বামীর মৃত্যুর আগে দেওয়া অনুমতি দেখাতে হবে।

অপরদিকে খ্রিষ্টধর্মেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দত্তক নেওয়ার বিধান নেই। মুসলমানদের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্টানরাও শিশুর শুধু অভিভাবকত্ব নিতে পারেন। অভিভাবকত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে মুসলিম ও খ্রিষ্টান ধর্মের আইনগুলো প্রায় একই রকম। অভিভাবক হিসেবে সন্তান লালনপালন করলেও মুসলিম ও খ্রিষ্টান আইন অনুসারে তারা সম্পত্তির অধিকার পাবেন না।

বাংলাদেশে দত্তক নেওয়ার চর্চাটা খুব প্রচলিত নয়। তবে দত্তক নিতে আগ্রহী পরিবার ও শিশুদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে একটি সহজ আইন প্রয়োজন। যাতে গৃহহীন শিশু মা-বাবার স্নেহে বেড়ে উঠতে পারে।


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫