Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

বরখাস্ত হওয়া ম্যাজিস্ট্রেট ঊর্মি সম্পর্কে যা জানা গেল

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১৬:০১

বরখাস্ত হওয়া ম্যাজিস্ট্রেট ঊর্মি সম্পর্কে যা জানা গেল

বরখাস্ত হওয়া ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই-আগস্ট মাসে চলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও কঠোরভাবে দমন করার চেষ্টা করেছিলেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সদ্য বরখাস্ত সহকারী কমিশনার (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) তাপসী তাবাসসুম (ঊর্মি)।

আন্দোলন চলাকালে তিনি জেলার সমন্বয়কদের ফোন করে মিছিল, মিটিং ও আন্দোলনের সময়সূচি বেঁধে দিতেন। তিনি কখনো সমন্বয়কদের বলতেন, ৩০ মিনিটের মধ্যে আজকের কর্মসূচি শেষ করতে হবে। আবার কখনো বলতেন, এক ঘণ্টার মধ্যে কর্মসূচি শেষ করতে হবে।

আজ মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) লালমনিরহাটের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া একাধিক সমন্বয়ক গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

এর আগে গতকাল সোমবার লালমনিরহাট জেলায় তাপসী তাবাসসুমকে (ঊর্মি) ওএসডির পর সাময়িক বরখাস্ত করায় জেলায় তাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

জেলার ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের একজন মো. হামিদুর রহমান। তিনি লালমনিরহাট সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আমরা যখন জেলায় ১৬ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু করি, তখন তিনি ছিলেন এই আন্দোলন দমনের মুখ্য ভূমিকায়। তিনি আমাদের প্রতিনিয়ত ফোন দিতেন। আমাদের কর্মসূচি সম্পর্কে জানতেন। তিনিই দিকনির্দেশনা দিতেন যে এত সময় নেওয়া যাবে না।

বিতর্কিত ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মির বাড়ি ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের নসিবপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেনের মেয়ে। তার বাবা ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা শহীদ স্মৃতি কলেজের সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহ্যবাহী আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। তবে বর্তমানে তিনি অবসর জীবনযাপন করছেন। ঊর্মির মা নাসরিন জাহান বর্তমানে হাজি কাশেম আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ মুক্তাগাছায় গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

তাপসী তাবাসসুমকে (ঊর্মি) সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগ থেকে পড়াশোনা করে। ৪০তম বিসিএস প্রশাসনে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর তিনি লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যুক্ত হন। তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সহকারী পরিচালক, রাজস্ব শাখা, জুডিশিয়াল মুনশিখানা (জেএম) সহকারী কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

শিক্ষাজীবনে তাপসী সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও চাকরি পাওয়ার পর তিনি হয়েছেন পুরোদমে আওয়ামীপন্থী। নাম না প্রকাশ করার শর্তে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তারই এক সহপাঠী গণমাধ্যমকে বলেন, তাপসী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবনে খুবই মেধাবী একজন শিক্ষার্থী ছিলেন। তার পরিবর্তন আসে চাকরি পাওয়ার পর থেকে। ছাত্রজীবনে তিনি কখনো রাজনীতির সঙ্গে সেভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তবে সামাজিক মাধ্যমে তাপসীর একাধিক ফেসবুক পোস্ট ছড়িয়েছে। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আমি জয় বাংলার লোক, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক।’ তবে এই পোস্ট তার কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এর আগে গত শনিবার ওই ম্যাজিস্ট্রেট ফেসবুকে প্রধান উপদেষ্টাকে কটাক্ষ করে লেখেন, “সাংবিধানিক ভিত্তিহীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রিসেট বাটনে পুশ করা হয়েছে। অতীত মুছে গেছে। রিসেট বাটনে ক্লিক করে দেশের সব অতীত ইতিহাস মুছে ফেলেছেন তিনি। এতই সহজ! কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে আপনার, মহাশয়। তবে একটি বিষয়ে আপনাকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’ আপনাদের এই স্লোগানটা যে অক্ষরে অক্ষরে সত্য ছিল এটা এত অল্প সময়ে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার করে দিয়েছেন, এ জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।”

এদিকে শহীদ আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যা ও ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে কটূক্তি করা সেই  নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মিকে চাকরি থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করে আইনের আওতায় আনার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক সমাজ। 

আজ মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ওই বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন তারা।

বক্তব্যে লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক সমাজের নেতারা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি বিভিন্নভাবে ছাত্রজনতার আন্দোলনকে বিতর্কিত করার চেষ্টায় নিমজ্জিত ছিলেন। তিনি আসলে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছেন।

এসময় তারা বীর শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে মন্তব্য ও প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসকে নিয়ে মন্তব্য করায় ঊর্মির বহিষ্কারের দাবি জানান। যদি দ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হয় তবে এরপরে আরো কঠোর কর্মসূচি দিবে বলেও জানান তারা।

এর আগে গত রবিবার তাবাসসুম ঊর্মিকে ওএসডি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলী করে প্রজ্ঞাপন জারি করলেও সোমবার বিকালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। তাই তার স্থায়ী বহিষ্কার ও গ্রেপ্তারের দাবি চেয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন তারা।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ফিরোজ হায়দার লাবলু বলেন, একজন রাষ্ট্রের কর্মচারী হয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা হওয়া উচিত। তার শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

লালমনিহাট জেলা প্রশাসক রকিব হায়দার বলেন, বিষয়টি নজরে আসার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে তাকে অবুমুক্ত করে পাঠিয়ে দেই। তার ফেসবুক আইডিতে যে লেখা ছিল অত্যন্ত আপত্তিকর।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫