Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

ডিবির হারুন কি তবে যুক্তরাষ্ট্রে?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:০৮

ডিবির হারুন কি তবে যুক্তরাষ্ট্রে?

নিউইয়র্কের একটি ভবনের সম্মেলনকক্ষে হারুন অর রশিদ। ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রায় দুই মাস পার হলেও এখনো গ্রেপ্তার হননি বিক্ষোভ দমনে গুলি ছুঁড়তে নির্দেশ দেওয়া ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ।

সূত্রে জানা গেছে, তিনি সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে পুলিশ ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। ২০০৬ সালে ডিভি লটারি পেয়ে তার স্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পান। সে সূত্রে তারা নিয়মিত যুক্তরাষ্ট্রে যাতায়াত করতেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা থাকায় গণঅভ্যুত্থানের পর হারুন অর রশিদ নিউইয়র্ক স্টেটের লং আইল্যান্ডে পালিয়ে গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির কয়েকজনের সহায়তায় তিনি সেখানেই গোপনে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। সেখানকার একটি ভবনের সম্মেলনকক্ষে হারুন অর রশিদ বসে রয়েছেন- এমন একটি ছবি সূত্রের বরাতে গণমাধ্যমের কাছে এসেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী সরকার পতনের পর অন্তত ১৮৭ জন পুলিশ কর্মকর্তা নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের অনুপস্থিতির কারণে বরখাস্তের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক ময়নুল ইসলাম। সাংবাদিকেরা পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাদের বিষয়ে প্রশ্ন করলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদেরকেই তথ্য দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।

৫ আগস্টের পর একটি সূত্র দাবি করেছিল, তিনি গুরুতর আহত হয়ে রাজধানীর একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হারুন অর রশিদকে নিয়ে তারপর থেকেই জনমনে প্রবল কৌতূহল তৈরি হয়। কিন্তু ওই তারিখের পর থেকে তার অবস্থানের বিষয়ে আর কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

অপর একটি সূত্র অবশ্য নিশ্চিত করেন ৬ আগস্ট হারুন অর রশিদ আদতেই গণপিটুনির শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তার এক আত্মীয় এতটি গণমাধ্যমকে তখন বলেছিলেন, হারুন এতটাই ‘জনপ্রিয়’ হয়ে গেছেন যে এখন প্রকাশ্যে আসতেও ভয় পাচ্ছেন।

৫ আগস্ট সোমবার ছাত্র-জনতার ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণার দিন অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান। আগের দিন রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, আর এক বিন্দু ছাড় দেওয়া হবে না। পুলিশ হত্যাকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

সোমবার সকাল থেকে ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ডিবির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সকালেই রাজধানীর সচিবালয়ের বিপরীতের সেন্ট্রাল কমান্ড ও কন্ট্রোল ইউনিটে চলে যান।

সেখানে বসেই রাজধানীর কয়েকশ পয়েন্টের সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল এবং মাঠের পুলিশ সদস্যদের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছিল।

সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে কয়েকজন পুলিশ সদস্য জানান, ৫ আগস্টের সকাল থেকেই ডিআইজি (উপ-মহাপরিদর্শক) হারুন অর রশিদ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। তিনি বারবার মাঠের পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন এবং বলছিলেন, সেদিনই হবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শেষ দিন, পরিস্থিতি এরপর শান্ত হয়ে যাবে।

ঢাকার উত্তর পয়েন্টে ব্যারিকেড ভেঙে যখন হাজারো জনতা শহীদ মিনারের দিকে এগোচ্ছিল, তখনো অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়। ডিআইজি হারুন উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারকে বারবার গুলি ছুঁড়তে নির্দেশ দিলেও তিনি জানান, ‘স্যার, অন্তত ২৫ হাজার মানুষ। অল্পসংখ্যক পুলিশের পক্ষে গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।’ তবুও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং হারুন অর রশিদ পুলিশ সদস্যদের বলপ্রয়োগে বাধ্য করেন।

ছাত্র-জনতা খিলক্ষেত পেরিয়ে বনানীর দিকে এগিয়ে গেলে সেখানে ব্যারিকেড দিয়ে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে বনানী ও গুলশান এলাকার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা এতে সায় দেননি। দুপুর সোয়া দুইটার দিকে জনতা জাহাঙ্গীর গেট থেকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের দিকে এগিয়ে গেলে তখনো গুলির নির্দেশ আসে। কিন্তু সেখানকার পুলিশ সদস্যরা জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, তাদের পক্ষে কিছু করার নেই।

এর মাঝেই সেনাবাহিনী প্রধান ভাষণ দেবেন এমন খবরে ডিআইজি হারুন আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। আবদুল গণি রোডের সেন্ট্রাল কমান্ড ও কন্ট্রোল ইউনিটে অধস্তন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এবার সেনাবাহিনী নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে, অ্যাকশনে যাবে। চিন্তার কিছু নেই।’

এসময় একজন জুনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা বলে ওঠেন, ‘স্যার, আপনি মনে হয় পরিস্থিতি বুঝতে পারছেন না। সেনাবাহিনী বলপ্রয়োগ করবে না। আমাদের সমীকরণে কোথাও কোনো ভুল হচ্ছে।’ এ কথা শুনে হারুন তাকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দেন।

দুপুর আড়াইটার সময় জনতার ঢল গণভবনে ঢুকে পড়লে হারুন অর রশিদ ওয়াকিটকিতে গণভবন প্রটেকশন বিভাগের সদস্যদের অ্যাকশনে যেতে বলেন। কিন্তু ওয়াকিটকির অপর প্রান্ত থেকে আর কোনো উত্তর আসেনি। ক্লোজসার্কিট ক্যামেরায় জনতাকে গণভবনে ঢুকতে দেখে হারুন অর রশিদ ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়েন। এরপর দীর্ঘক্ষণ তিনি আর কোনো কথা বলেননি।

শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দুপুরে লাখো জনতা ঢাকার রাজপথে নেমে আসে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে শহীদ মিনার ও গণভবনের দিকে জনতার ঢল এগোতে থাকে।

ডিএমপির সেন্ট্রাল কমান্ড ও কন্ট্রোল ইউনিট ভবনের সামনে শেখ মুজিবের একটি বিশাল ব্যানার টানানো ছিল। উত্তেজিত জনতা ভবনটির উদ্দেশ্যে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে শুরু করে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ব্যানারটি সরিয়ে ফেলা হয় এবং মূল ফটক আটকে দেওয়া হয়।

জনতা ভবনের প্রাঙ্গণে ঢুকতে না পারলেও বাইরে থেকে ইট ছুঁড়ে মারতে থাকে। প্রাণভয়ে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা তাদের ইউনিফর্ম খুলে ফেলেন এবং সাধারণ পোশাক পরে ১৩ ফুট উঁচু দেওয়াল টপকাতে শুরু করেন।

ডিআইজি হারুন অর রশিদও একই কায়দায় দেওয়াল টপকাতে গিয়ে গুরুতর আঘাত পান। পায়ে ও শরীরের নিচের অংশে ব্যাপক আঘাত নিয়ে তিনি আইজিপির সঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরে চলে যান। বিকালে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দেওয়াল টপকে প্রাণে বাঁচেন।

ওই রাতে তিনি কোথায় ছিলেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে একটি সূত্র জানায়, তিনি কূটনৈতিক এলাকায় একটি দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

হারুনের স্ত্রী ২০০৬ সালে ডিভি লটারি পেয়ে আমেরিকার ভিসা পান। বৈধ ভিসা থাকার কারণে তিনি আমেরিকা পালানোর চেষ্টা করেন এবং মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ করে বিমানবন্দরে নিরাপদে পৌঁছানোর নিশ্চয়তা চান।

তবে কূটনৈতিক সূত্র জানায়, দূতাবাস তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর তিনি সেখান থেকে ফিরে আসেন।

বিকেলে পুলিশের বিশেষ অস্ত্র ও কৌশল বাহিনীর (সোয়াট) একটি গাড়ি তাকে মিরপুরের একটি জায়গায় দিয়ে আসে। সেখানে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে তিনি বিমানবন্দর দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। গাড়িতে করে তিনি বিমানবন্দরে পৌঁছান।

তবে টার্মিনালে ঢোকার আগেই জনতা তাকে চিনে ফেলে এবং মারধর করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫