রক্তদহ বিল ও খাল থেকে কচুরিপানা পরিষ্কার
পানিতে তলিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পেল বোরো ধান

নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ মে ২০২০, ১৫:৪৯

নওগাঁর রাণীনগরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী বিল রক্তদহ। এই বিলের নিচু ও আশেপাশের কয়েক হাজার বিঘা জমিতে চাষ করা হয়েছে অধিক ফলনশীল বোরো ধান।
বিলে জমা বৃষ্টির পানি ঠিকমতো নিষ্কাশন হতে না পেরে প্রতি বছরই বৃষ্টির পানি জমে কৃত্রিম জলাবদ্ধতার কারণে তলিয়ে যেতো হাজার হাজার বিঘা জমির ধান।
তাই এবার বর্ষা মৌসুমের আগেই এই সমস্যা থেকে উত্তোরণের জন্য বৃষ্টির পানি সহজেই নিষ্কাশনে করতে স্থানীয় এমপির নির্দেশে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ও কৃষি কর্মকর্তার নেতৃত্বে বিলের মাঝে থাকা কচুরিপানা পরিস্কার করা হয়েছে।
গত রবিবার দিনব্যাপী স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও স্থানীয় কৃষকদের সহযোগিতায় বিলের পানি নিষ্কাশনের প্রধান নালা রতনডারী খাল থেকে অবৈধভাবে পেতে রাখা মাছ ধরার খাড়ি ও বানা অপসারণের মাধ্যমে কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়। এতে করে বিলের জমে থাকা অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি সহজেই এই খাল দিয়ে নেমে যাবে এবং পানিতে তলিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে হাজার হাজার বিঘা জমির পাকা বোরো ধান।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে রক্তদহ বিলের নিচু ও আশেপাশের প্রায় ২-৩হাজার হেক্টরসহ উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮ হাজার ৮৮৫হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের অধিক ফলনশীল বোরো ধান চাষ করা হয়েছে।
প্রতিনিয়ত এই কচুরিপানা পরিষ্কারের কাজ পর্যবেক্ষণের জন্য স্থানীয় মেম্বার ও গ্রাম পুলিশের একটি দল গঠন করে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কৃষকের ধান পুরোপুরি ঘরে না ওঠা পর্যন্ত এই দল মাঠে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা।
স্থানীয় কৃষক আলী হোসেন জানান, প্রতিবছর এইসব খালে কচুরিপানা জমে থাকার কারণে বিলের পানি বের সময়মতো হতে পারে না। যার কারণে পানিতে তলিয়ে যায় শত শত বিঘা জমির পাকা বোরো ধান। কিন্তু এবছর একটু আগেই প্রশাসনের সহযোগিতায় খাল ও বিল থেকে কচুরিপানাগুলো পরিষ্কার করা হলো। আশা রাখি এবার বৃষ্টির পানি যতই হোক না কেন তা সহজেই বের হয়ে যাওয়ার কারণে এবার আর পানিতে ধান তলিয়ে যাবে না।
সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান পিন্টু বলেন, স্থানীয় এমপির নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি অফিসের সহযোগিতায় পরিষদের গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয় কৃষকদের সহযোগিতা নিয়ে খাল ও বিল থেকে কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে। এর ফলে খাল দিয়ে সহজেই বিলে জমে থাকা অতিরিক্ত পানি নেমে যাবে আর তলিয়ে যাবে না জমির ধান। আশা রাখি এতে করে কৃষকরা অনেক লাভবান হবেন।
কৃষি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, যদি আর কোনো প্রাকৃতি দুর্যোগ হানা না দেয় ও বর্তমান আবহাওয়া ধানের অনুকূলে থাকে ও কৃষকরা যদি সঠিক সময়ে ধান ঘরে তুলতে পারেন তাহলে এবার উপজেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে এই সময়ে করনীয় বিষয়ে কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম বলেন, প্রতিবছরই কৃত্রিম জলাবদ্ধতার কারণে এই বিলের নিচু ও আশেপাশের হাজার হাজার বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে করোনাভাইরাসের এই মহামারির সময়ে কোনো জমির ধান বিন্দুমাত্র নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। তাই আমি অগ্রিম কি ব্যবস্থা গ্রহণ করলে পানিতে ধান তলিয়ে যাবে না এবং সহজেই কৃষকরা তাদের ধান ঘরে তুলতে পারবেন সেই জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ ও তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেছি।