Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

আপাতত বাতিল হচ্ছে না আদানির সঙ্গে চুক্তি: রয়টার্সের প্রতিবেদন

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:৪৪

আপাতত বাতিল হচ্ছে না আদানির সঙ্গে চুক্তি: রয়টার্সের প্রতিবেদন

ভারতের ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র। ছবি: সংগৃহীত

ভারতীয় প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনা চালু রাখবে বাংলাদেশ। দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ এবং আইনি জটিলতার কারণে প্রতিষ্ঠানটি সঙ্গে চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়নি। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ কেনার ক্ষেত্রে ইউনিটপ্রতি দাম নিয়ে যে উদ্বেগ ছিল তাও আপাতত স্থগিত থাকবে। বিষয়টির সঙ্গে সরাসরি পরিচিত দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে আজ শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। 

গত মাসের শুরুতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়েই আগের সরকারের করা চুক্তিগুলো জাতির স্বার্থ রক্ষা করেছে কি না তা যাচাই করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করেছে। বিশেষ করে বিশেষ আইনের অধীনে শুরু করা এবং স্বচ্ছতার অভাব আছে এমন প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখবে এই প্যানেল। 

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৭ সালে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়। আদানি গ্রুপের ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ২৫ বছরের জন্য একচেটিয়াভাবে বিদ্যুৎ কেনার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ কেনার ক্ষেত্রে মূল্যসংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে এই চুক্তিও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। 

বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটি বাংলাদেশের বিদ্যুতের চাহিদার প্রায় এক-দশমাংশ পূরণ করে, তাই আদানির চুক্তিটি সরাসরি বাতিল করা কঠিন হবে। দ্বিতীয় সূত্রটি জানিয়েছে, এ ছাড়া আন্তর্জাতিক আদালতে এ-সংক্রান্ত আইনি চ্যালেঞ্জ শক্তিশালী প্রমাণ ছাড়া ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা আছে। এক্ষেত্রে যদি চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব না হয়, তাহলে একমাত্র সম্ভাব্য বিকল্প হতে পারে শুল্ক কমাতে পারস্পরিক চুক্তি। 

এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘কমিটি বর্তমানে বিষয়টি পর্যালোচনা করছে এবং এক্ষেত্রে আগেভাবে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’ 

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) একজন কর্মকর্তা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সর্বশেষ অডিটের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘আদানি পাওয়ারের কাছ থেকে এক ইউনিট বিদ্যুৎ কিনতে বাংলাদেশের প্রায় ১২ টাকা খরচ হয়। যা ভারতের অন্যান্য বিদ্যুৎ বেসরকারি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি এবং ভারতীয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় ৬৩ গুণ বেশি।’ 

এ বিষয়ে আদানির এক মুখপাত্র বলেছেন, চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে আদানি ও অন্যান্য ভারতীয় পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিয়েছে। আদানির কাছে এমন কোনো ইঙ্গিত নেই যে, বাংলাদেশ এই চুক্তি পুনর্বিবেচনা করবে। মুখপাত্র আরও বলেছেন, ‘বকেয়া বেড়ে যাওয়ার পরও আমরা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালিয়ে যাচ্ছি, যা উল্লেখযোগ্য উদ্বেগের বিষয় এবং প্ল্যান্টের কার্যক্রমকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।’ 

আদানি পাওয়ারের পাওনা ৮০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার ক্ষেত্রে কিছুটা হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া সব মিলিয়ে ভারতীয় বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের কাছে ১০০ কোটি ডলার পায়। বাংলাদেশে ডলার সংকটের কারণে এই বকেয়া পরিশোধে ঝামেলা হচ্ছে। 

আদানি পাওয়ারের মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ক্রমাগত আলোচনা করে যাচ্ছি। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে, আমাদের বকেয়া শিগগিরই পরিশোধ করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘আদানি পাওয়ার আত্মবিশ্বাসী যে, ঢাকা প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে, ঠিক যেমন কোম্পানিটি চুক্তির শর্তাবলি পূরণ করেছে।’ তবে প্রতি ইউনিটের দাম এত বেশি কেন সে প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি। 

এদিকে দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি বলছে, মূল্যসংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে এই চুক্তির পুনর্বিবেচনা জরুরি। দলের জ্যেষ্ঠ নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, ‘আদানির সঙ্গে চুক্তিটি শুরু থেকেই অতিরিক্ত মূল্যের বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এবং এটি একটি ইতিবাচক যে, সরকার এখন বিষয়টি পর্যালোচনা করছে। আমি আশা করি তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।’ 

নোবেলজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার আগস্টে বাংলাদেশের ক্ষমতা গ্রহণ করে। সরকার এরইমধ্যে দেশীয় প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপের পরিকল্পিত ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্প বাতিল করেছে। সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, আরও অনেক প্রকল্পই বাতিল করা সম্ভব।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫