Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

বিদেশে অপরাধী পলায়ন ও বন্দি প্রত্যর্পণ আইন

Icon

লোকমান হাওলাদার

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২০

বিদেশে অপরাধী পলায়ন ও বন্দি প্রত্যর্পণ আইন

প্রতীকী ছবি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর অনেক অপরাধী আইনের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন; কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্রে কোনো অপরাধী পালিয়ে আইনের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারে না। প্রতিটি স্বাধীন রাষ্ট্র তাদের নিজস্ব বিচার-পদ্ধতি অনুসরণ করে সংঘটিত অপরাধের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করে। দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ২ ধারায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরের যে সমস্ত অপরাধ সংঘটিত হয় তার শাস্তির কথা বলা হয়েছে। একই আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে- বিদেশে কোনো অপরাধ করে বাংলাদেশে চলে এলেও দেশের প্রচলিত আইনে অপরাধীর বিচারকার্য সম্ভব। এ ছাড়া আভ্যন্তরীণ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অপরাধীদের প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত আইন রয়েছে। এই আইনে অপরাধীদের তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা হয়।

বিশ্বব্যাপী সমাদৃত আইন হচ্ছে- বন্দি প্রত্যর্পণ আইন বা চুক্তি (The Extradition Act)। এই আইনের বলে পারস্পরিক বন্দি চুক্তি স্বাক্ষরিত দেশগুলো একে অপরের অপরাধীকে ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে। বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি, যা আন্তঃরাষ্ট্রীয় হয়ে থাকে। বাংলাদেশের বন্দি প্রত্যর্পণ আইন ১৯৭৪ (The Extradition Act, 1974) নামে পরিচিত, যেখানে বন্দি প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। বন্দি প্রত্যর্পণ আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী যখনই বাংলাদেশে এবং কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি সম্পাদন হবে, তৎক্ষণাৎ সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সেই রাষ্ট্রকে চুক্তিভুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে। অর্থাৎ বন্দি প্রত্যর্পণ একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা বাংলাদেশ সরকার যে কোনো সময়ে যে কোনো দেশের সঙ্গে নতুন করে চুক্তিবদ্ধ হতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে ভারত এবং থাইল্যান্ডের সঙ্গে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি প্রচলিত রয়েছে। একই আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার ক্ষেত্রবিশেষে প্রত্যর্পণ চুক্তিবহির্ভূত কোনো দেশের কোনো অপরাধী যদি বাংলাদেশে অবস্থান করে, তা হলে সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা ওই অপরাধীকে সংশ্লিষ্ট প্রত্যর্পণ চুক্তিবহির্ভূত রাষ্ট্রে ফেরত দিতে পারবে এবং সেই রাষ্ট্রকে চুক্তিভুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে।

বন্দি প্রত্যর্পণ আইনের ১৫ ধারার বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের কোনো অপরাধী যদি অন্য কোনো চুক্তিভুক্ত রাষ্ট্রে অবস্থান করে সেক্ষেত্রে তাকে বাংলাদেশে সমর্পণের জন্য আবেদন করতে পারবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশে নিয়োজিত ওই রাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রতিনিধির কাছে অথবা উক্ত রাষ্ট্রে নিয়োজিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধির মাধ্যমে সেই রাষ্ট্রের সরকারের কাছে আবেদন করতে পারবে। বন্দি প্রত্যর্পণ আইনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়, যেন চুক্তিভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বন্দি বিনিময় যথাযথভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হয়। 

তবে আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধীকে প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ১. যে অপরাধীর জন্য প্রত্যর্পণ চাওয়া হচ্ছে, সে যে অপরাধে অভিযুক্ত, তা উভয় দেশেই অপরাধ বলে বিবেচিত হতে হবে। ২. যে কোনো রাষ্ট্র প্রত্যর্পণকারীকে শুধু সেই অপরাধের জন্য বিচার করতে পারে, যার জন্য প্রত্যর্পণ মঞ্জুর করা হয়েছিল; অর্থাৎ অন্য কোনো অপরাধের এক্ষেত্রে বিচার করা যাবে না। ৩. কৃত অপরাধটির শাস্তি যদি এক বছরের কম হয়, সেক্ষেত্রে প্রত্যর্পণ আইন দ্বারা কোনো অপরাধীকে ফেরত দিতে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র বাধ্য নয়। ৪. কোনো রাষ্ট্র কোনো অপরাধীকে ফেরত দেবে না, যদি সেই রাষ্ট্র এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, অভিযুক্ত অপরাধী বা দোষী সাব্যস্ত অপরাধী কোনো রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী এবং তাকে রাজনৈতিক মামলাতে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তাকে ফেরত দিতে ওই রাষ্ট্র বাধ্য নয়; অর্থাৎ রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণকারী কোনো অপরাধীকে প্রত্যর্পণ চুক্তির মাধ্যমে ফেরত দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়।

এই আইনের আলোকে বলা যায়- বাংলাদেশ থেকে যেসব অপরাধী বিভিন্ন দেশে পালিয়ে গেছে তারা যদি রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকে তবে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা রাষ্ট্রের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। বিচারে বাধা হয়ে দাঁড়াবে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫