Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইনের প্রয়োগ ও সীমাবদ্ধতা

Icon

লোকমান হাওলাদার

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩৯

নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইনের প্রয়োগ ও সীমাবদ্ধতা

প্রতীকী ছবি

নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও পুরুষের সম-অধিকারের বিধান রয়েছে। নারীর অধিকার রক্ষায় ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে প্রণীত হয়েছে একের পর এক আইন। তবু বেড়ে চলেছে নারী নির্যাতন। গণমাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, পারিবারিক নির্যাতনের খবর পাওয়া যায়- যদিও অনেক ক্ষেত্রে এসব ঘটনা সমাজে প্রকাশ হয় না। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো অনেক সময় সামাজিক লজ্জা বা ভয় থেকে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে ইতস্তত করেন। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই এসব ঘটনার প্রকৃত পরিসংখ্যান এবং সঠিক বিচার প্রাপ্তি সম্ভব হয় না।

অথচ নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর আইন রয়েছে। এ আইনের অধীনে অভিযুক্তকে মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া যেতে পারে। দেশে নারীর প্রতি নির্যাতনমূলক অপরাধসমূহ কঠোরভাবে দমনের উদ্দেশ্যে ২০০০ সালে একটি বিশেষ আইনও প্রণয়ন করা হয়। আইনটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ নামে অভিহিত। আইনটি বিশেষ আইন হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ আইনে প্রাধান্য পাবে অর্থাৎ প্রচলিত অন্যান্য আইনের ওপর প্রাধান্য লাভ করবে। এই আইনের অধীনে অপরাধ বিচারের জন্য প্রত্যেক জেলা সদরে একটি করে ট্রাইব্যুনাল থাকে এবং প্রয়োজনে সরকার সেই জেলায় একাধিক ট্রাইব্যুনালও গঠন করতে পারে এবং এই ট্রাইব্যুনাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নামে অভিহিত হবে। যদিও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনটি একটি কঠোর আইন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এর অপব্যবহার এবং সীমাবদ্ধতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। দেশে নারী নির্যাতনের অনেক মিথ্যা মামলার অভিযোগ রয়েছে। মামলা হওয়া অধিকাংশ নারী নির্যাতনের কোনো প্রমাণ মেলে না। এর প্রধান কারণ হলো আইনটি জামিন অযোগ্য এবং কঠোর শাস্তির বিধান থাকায় কিছু মানুষ ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা বা সম্পত্তিগত বিরোধের জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। অনেক সময় মিথ্যা মামলা দায়েরের কারণে আসল অপরাধীর শাস্তি পেতে দেরি হয় এবং ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার বিলম্বিত হয়। মামলার জটিলতা এবং আইনি প্রক্রিয়ার ধীরগতির কারণে ভুক্তভোগী পরিবার বিচার প্রক্রিয়ার ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। অন্যদিকে মিথ্যা মামলাগুলো তদন্ত প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টি করে, যার ফলে প্রকৃত অপরাধীরা অনেক সময় আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে ছাড়া পেয়ে যান। তাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হলে আইন প্রয়োগের দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন। পুলিশ ও তদন্তকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতা এবং স্বচ্ছতা বাড়াতে হবে, যাতে মিথ্যা মামলাগুলো দ্রুত বাতিল করা যায় এবং প্রকৃত অপরাধীরা দ্রুত শাস্তি পায়। এ ছাড়াও তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে, যাতে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হয়। অনেক সময় সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহে বিলম্বের কারণে বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয় এবং অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যায়। এজন্য ডিজিটাল প্রমাণ সংগ্রহের আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা যেতে পারে।

তবে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইন একটি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করলেও যথেষ্ট নয়। পরিবার এবং সমাজে নারীর প্রতি সম্মান ও মূল্যবোধের অভাব নারী নির্যাতনের অন্যতম প্রধান কারণ। প্রতিটি পরিবারের অভিভাবক যদি তাদের সন্তানদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধ তৈরি করেন, তবে সমাজে নারী নির্যাতনের হার অনেকাংশে কমে আসতে পারে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের উচিত নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা। তা হলেই নারীরা প্রকৃতপক্ষে সুরক্ষিত হবে এবং সমাজে তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫