Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার প্রক্রিয়া

Icon

লোকমান হাওলাদার

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৫

আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার প্রক্রিয়া

প্রতীকী ছবি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর অনেক অপরাধী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। অনেকে আবার দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন। এমন অবস্থায় পলাতক আসামিদের বিচার প্রক্রিয়া কী হতে পারে তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

তবে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় আসামি অনুপস্থিত থাকলেও সুনির্দিষ্ট আইনের অধীনে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করার পদ্ধতি রয়েছে। কিন্তু এতে প্রশ্ন উঠতে পারে আসামির অনুপস্থিতিতে মামলা চলমান থাকলে আসামি ন্যায়বিচার হতে বঞ্চিত হবেন কিনা। আবার আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার হলে সেটা ন্যায় হবে কিনা বা বাদী পক্ষে একতরফা বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হলে আসামি পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিনা। এ ক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, একজন আসামি বা অভিযুক্ত ব্যক্তি মামলা সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর যদি আদালতকে সম্মান প্রদর্শন বা শ্রদ্ধা দেখিয়ে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ না করেন বা আদালতে হাজির না হন বা আদালতের আদেশ মোতাবেক হাজির হয়ে তার বক্তব্য পেশ না করেন তবে সেই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পলাতক আসামি হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। বিচার নিষ্পত্তির জন্য বাদী মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত ব্যক্তি অনুপস্থিত থাকলেও যাতে সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচার কার্যক্রম শেষ করতে পারে সেই লক্ষ্যে একজন পলাতক আসামির বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া বিধিবদ্ধ আইনগতভাবে চলমান থাকে। কারণ বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৫(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ফৌজদারি অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচার লাভের অধিকারী হবেন।

আমাদের দেশের আইন ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৩৯(খ) ধারা মোতাবেক একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর অভিযুক্ত ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে বিচার পরিচালিত হয়। একজন অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর যদি ওই অভিযুক্ত ব্যক্তি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অথবা নিজেকে গোপন রাখছেন বলে আদালত মনে করেন তবে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ৮৭ ধারা মোতাবেক একটি লিখিত ঘোষণাপত্র (হুলিয়া) জারি করতে পারেন এবং পরবর্তীকালে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ৮৮ ধারায় সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ প্রদান করতে পারেন। আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার প্রক্রিয়া চলমান রাখতে, হুলিয়া বা ক্রোকের বিধানসমূহ সঠিকভাবে পালন না হলে মামলার পরবর্তী কার্যক্রম এখতিয়ার বহির্ভূত ও বাতিল বলে গণ্য হবে। 

ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ৩৩৯(খ) ধারার বিধানাবলি পালন না করা প্রাকৃতিক ন্যায়বিচার নীতির লঙ্ঘন। বিচার চলমান থাকা অবস্থায় একজন পলাতক আসামির ক্ষেত্রে বাদীর আনীত সাক্ষী বা রাষ্ট্র পক্ষের সাক্ষীকে জেরা করার সুযোগ নেই তবে এ ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রম রয়েছে তা হলো হত্যা মামলার ক্ষেত্রে আদালত কর্তৃক একজন আইনজীবী নিয়োগ করা হয়। এ ছাড়া দুই বা ততোধিক আসামি থাকলে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ৫৪০(ক) ধারা মোতাবেক আসামির অনুপস্থিতিতে একজন আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে বিচার চলমান রাখার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ২০৫ ধারায় একজন ম্যাজিস্ট্রেট আসামির ব্যক্তিগত হাজিরা রেহাই দিতে পারেন আসামি পক্ষে একজন আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে।

বাংলাদেশের ফৌজদারি আইনের ৩৩৯(খ) ধারাসহ বিশেষ কিছু আইনে অনুপস্থিতিতে বিচারের বিধান রয়েছে। যেমন- বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪-এর ধারা ২৭(৬) ও ২৭(৬এ)-তে অনুপস্থিতিতে বিচারের বিধান সম্পর্কে উল্লেখ আছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ৬৯ ধারায় এবং আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২-এর ১১ ধারায় এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২১ ধারায়ও আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার প্রক্রিয়ার একই বিধান উল্লেখ রয়েছে।

তাই বলা যায়, বাংলাদেশে বলবৎ দণ্ডবিধি আইনের আলোকে পলাতক আসামির বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করতে আইনি কোনো বাধা নেই। অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি দণ্ডিত হন তবে সে যখন দেশে ফিরবে বা আসামির সন্ধান পাওয়া যাবে আদালত তার ওপর আনীত দণ্ড ভোগ করাতে পারবেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫