Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

প্রতারণার আইনি প্রতিকার

Icon

লোকমান হাওলাদার

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৬

প্রতারণার আইনি প্রতিকার

প্রতীকী ছবি

ফাহমিদার সঙ্গে এক বছর আগে পরিচয় হয় ফারহানের। পরিচয়ের তিন-চার দিনের মধ্যেই তাদের প্রেম হয়ে যায়। প্রেমের এক সপ্তাহ পর ফারহানের সঙ্গে ফাহমিদার শারীরিক সম্পর্কও হয়। এরপর থেকে টানা প্রায় আট মাস নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে। এরপর তাদের ভালোবাসায় ভাটা পড়তে থাকে। পরিচয়ের সময় ফারহান যে নাম ও ঠিকানা বলেছিলেন, তার এনআইডি কার্ডের সঙ্গে সেই নামের অমিল খুঁজে পাওয়া যায়। এরপর নানাভাবে তার সঠিক পরিচয় ও ঠিকানা খুঁজতে থাকে ফাহমিদা। কিন্তু সঠিক পরিচয় পাওয়া সম্ভব হয়নি।

ছেলেটি সঙ্গে ফাহমিদার যখন পরিচয় হয় তখন তার বাড়ির পাশে একটি ভবন নির্মাণের কাজে জড়িত ছিলেন। সেখান থেকেই পরিচয় হয়। কিন্তু হঠাৎ করে একদিন সে চলে যায়। তাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবাক করার বিষয়, ওই বাড়ির নির্মাণ কাজে অন্য যারা ছিলেন তারা কেউ ফারহানের সঠিক পরিচয় জানাতে পারেননি। সম্পর্ক থাকার সময় তার মোবাইল ফোনে কিছু ঘনিষ্ঠ ছবি তোলা হয়। এখন ফাহমিদা ভয়ে রয়েছেন যদি পরে ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে। তাই আইনের আশ্রয় নিতে চাচ্ছেন তিনি।

প্রতিটি অপরাধের জন্য আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। ফারহান নামে পরিচয় দেওয়া ছেলেটি ফাহমিদার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। প্রতারণা নানাভাবেই হতে পারে। যেমন ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে প্রতারণা, মিথ্যা পরিচয় প্রদান করে প্রতারণা, বিয়ে নিয়ে প্রতারণা, আর্থিক প্রতারণা ইত্যাদি। একেক ধরনের প্রতারণার অভিযোগে আলাদা শাস্তির বিধান রয়েছে। সাধারণত প্রতারণার ক্ষেত্রে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় মামলা অনেক বেশি প্রচলিত। কারণ এই ধারায় শাস্তি সর্বোচ্চ সাত বছর। পাশাপাশি অর্থদণ্ডেরও বিধান আছে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে, তার কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করে, সেটি ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। এই অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। ফাহমিদার প্রেমিক তার কাছ থেকে কোনো সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রেম করেছে এবং তার বিশ্বাস অর্জন করে, তারপর ক্ষতিসাধন করেছে। এর জন্য আইনি প্রতিকার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাকে প্রমাণ করতে হবে, সে প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই ফাহমিদার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল।

যেহেতু সে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে, নাম-পরিচয় গোপন করে তার সঙ্গে প্রেম করেছে, কাজেই প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণ করা সহজ হবে। তা ছাড়া তার প্রেমিক ফাহমিদার বিশ্বাস ভঙ্গ করে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করে পরবর্তী সময়ে উধাও হয়ে গেছেন। সুতরাং তিনি সেই বিশ্বাস ভঙ্গের জন্য দণ্ডবিধির ৪০৬ ধারায় প্রতিকার চাইতে পারবেন। দণ্ডবিধির ৪০৬ ধারায় বলা আছে, অপরাধজনিত বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে দোষী হলে দায়ী ব্যক্তিকে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। বিশ্বাসভঙ্গ একটি জামিন অযোগ্য অপরাধ। এর জন্য থানায় এজাহার দায়ের করে মামলা করা যায় অথবা আদালতে সরাসরি মামলা করা যায়। ফাহমিদা যেহেতু ছেলেটির নাম-পরিচয় জানেন না, কাজেই তাকে ফারহান নামে পরিচয় দেওয়া ছেলেটির চেহারা ও শারীরিক গঠনের বর্ণনা দিলে পুলিশ খুঁজে বের করতে পারবে। সে যাতে ফাহমিদার ছবি ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেল করতে না পারে, সে জন্য অবশ্যই একটি সাধারণ ডায়েরি করা উচিত। আর ভয় না পেয়ে আইনের আশ্রয় নিতে হবে। আইনের মাধ্যমে এসব ব্যক্তির শাস্তি হলে সমাজের অন্য কেউ এমন প্রতারণা করতে সাহস পাবে না।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫