তিস্তার চরবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ করছে বাঁশের সাঁকো

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ মে ২০২০, ১১:৫৪

ছবি: লালমনিরহাট প্রতিনিধি
কেউ দিয়েছেন বাঁশ, কেউ কাঠ আবার কেউ দিয়েছেন নগদ অর্থ। আবার নিজ উদ্যোগেই সেই বাঁশ-কাঠ দিয়ে শুরু হয়েছে সাঁকো তৈরির কাজ।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মূল ভুখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কালমাটি মাঝের চরে গিয়ে চোখে পড়ে এমন চিত্র।
তিস্তা নদীর বুকে উপজেলার মূল ভুখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কালমাটি মাঝের চর। এ চরে বসবাস করেন পাঁচ শতাধিক পরিবার। চরটির কোল ঘেষে বয়ে গেছে তিস্তার একটি শাখা নদী। নদীর ওপারে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা। কোনো সেতু না থাকায় প্রতিদিন কলাগাছের ভেলায় চরে ঝুঁকি নিয়ে নদী পাড় হয়ে কাউনিয়া উপজেলার উপর দিয়ে লালমনিরহাটে আসে গ্রামের মানুষজন।
ওই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য যখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে একাধিকবার ঘুরেও কোনো কাজ হয়নি তখন গ্রামের মানুষ বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুরু করে বাঁশ, কাঠ ও অর্থ সংগ্রহ। বর্ষা আসার আগেই সবাই মিলে শুরু করে তিস্তার ওই শাখা নদীর উপর ২০০ মিটার বাঁশ কাঠের সাঁকো তৈরির কাজ। গত ২৬ এপ্রিল থেকে সাঁকো তৈরির কাজ শুরু হয় এবং এটি আগামী ১৫ মে’র মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কালমাটি মাঝের চরের কৃষক দুলাল মিয়া বলেন, তারা তিস্তা নদীর কারণে লালমনিরহাটের মূল ভুখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। কিন্তু এই চরের সাথে সহজ ও নিকট যোগাযোগ রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা। ওই উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়নে তারা হাট-বাজার, কেনাকাটা ও ফসল কেনা-বেচা করে আসছেন। শুধু আইনি ও সরকারি কোনো কাজে যেতে হয় লালমনিরহাটে। তবে শুষ্ক মৌসুমে কোনোভাবে নদী পাড় হতে পারলেও বর্ষাকালে তিস্তা যখন ভরপুর থাকে তখন তাদেরকে পড়তে হয় সমস্যায়। তখন লালমনিহাট জেলা শহরের সাথে যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
ওই চরের কৃষক মতিন মিয়া বলেন, সাঁকোটি নির্মার্ণের জন্য তারা জনপ্রতিনিধিদের কাছে অনেকবার ধর্ণা দিয়ে কোনো ফল না পাওয়ায় অবশেষে নিজেরাই উদ্দ্যেগ নিয়ে সাঁকো তৈরি করছেন। এতে খরচ হবে প্রায় দুই লাখ টাকা। এই সেতু নির্মাণে মাঝের চরের পাঁচ শতাধিক পরিবারের সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সাঁকোটি তৈরি হলে বর্ষাকালে তারা সহজে যাতায়াত করতে পারবেন।
চরের কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, চারদিকে নদী ঘেরা চরে তারা বসবাস করেন। মাঝের চরে নেই কোনো স্কুল, নেই স্বাস্থ্য কেন্দ্র। সব কিছুর সেবা পেতে যেতে হয় কাউনিয়া উপজেলায়। সেতু না থাকায় তাদের স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের যাতায়াতে পড়তে হয় সমস্যায়।
খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, চারদিকে তিস্তা নদী ঘেরা মাঝের চর। তিস্তার এই শাখা নদীর উপর সাঁকো নির্মাণের চেষ্টা অনেক দিনের। অবশেষে চরবাসী নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে সেই চেষ্টা সফল করছে।
এই সাঁকোটি মজবুত ও টেকসই করতে সরকারি অথবা বেসরকারি সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন তিস্তার চরবাসী।