ভাষাসৈনিক জাহিদ হোসেন মুসা স্মরণে দোয়া মাহফিল

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২১:০৮

মো. জাহিদ হোসেন মুসা মিয়া। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
বিশিষ্ট ভাষাসৈনিক ও সমাজসেবক মো. জাহিদ হোসেন মুসা’র চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ রবিবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে মহাখালীর রাওয়া ক্লাব অডিটোরিয়ামে এই স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
দোয়া মাহফিলে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান ও জাহিদ হোসেন মুসা’র জ্যেষ্ঠ সন্তান মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী। এ ছাড়া স্মৃতিচারণ করেন প্রয়াতের নাতি মুসাওয়াত জাহেদী ও নাতনি তাসনিয়া জাহেদী।
বাবার স্মৃতিচারণকালে মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, বাবা ছিলেন আমাদের আদর্শ। তিনি সহজ-সরল জীবনযাপন করতেন। আমাদেরকেও সৎভাবে চলার শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা বাবার কাছ থেকে সৎ জীবনযাপনের শিক্ষাটি নিতে পেরেছি বলে মনে করি।
তিনি আরও বলেন, বাবা রেডিয়েন্টের উপদেষ্টা ছিলেন। আজকে রেডিয়েন্টের যে বিস্তার, তা বাবার অনুপ্রেরণা ও পরামর্শের ফসল। আপনাদের সবার সহযোগিতায় রেডিয়েন্ট পরিবারকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
অনুষ্ঠান শেষে জাহিদ হোসেন মুসা মিয়ার রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
মো. জাহিদ হোসেন মুসা ঝিনাইদহের তথা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে সম্মান ও ভালোবাসা স্মরণীয় একটি নাম। তিনি পরিচিত ছিলেন মুসা মিয়া নামে। সদালাপী এই মানুষটি ছিলেন একাধারে ভাষাসৈনিক, রাজনীতিক, শিক্ষানুরাগী এবং সমাজসেবক।
১৯৩২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের পাইকপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। রাজনৈতিক আবহের মধ্যে বড় হওয়ার কারণে তিনি ছাত্রাবস্থায়ই প্রগতিশীল রাজনীতিতে যুক্ত হন।
পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা পর্ব থেকেই ঝিনাইদহে তার পৈতৃক বাড়িতে জাতীয় রাজনীতিবিদদের অনেকেরই যাতায়াত ছিল। এ সময় তার ঘনিষ্ঠতা হয় মওলানা ভাসানীর সাথে। মওলানা ভাসানী ঝিনাইদহে এলে তাদের বাড়িতেই থাকতেন। এছাড়াও সে সময় ওই বাড়িতে আসতেন কাজী জাফর আহমদ, রাশেদ খান মেনন, হাজি দানেশ প্রমুখ নেতারা।
রাজনৈতিক জীবনে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের সময়কালে তিনি ঝিনাইদহ মহকুমা ও যশোর জেলায় মাতৃভাষার মর্যাদা আদায়ের আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক হিসেবে ভূমিকা রাখেন। ১৯৫২-৫৭ সাল পর্যন্ত ঝিনাইদহ মহকুমা (বর্তমানে জেলা) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর মওলানা ভাসানীর নির্দেশে ১৯৭৩ সালে ঝিনাইদহ মহকুমা ন্যাপের সভাপতি থাকাকালে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হন।
জাহিদ হোসেন মুসার সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও অবাধ বিচরণ ছিল। শিল্পানুরাগী মুসা মিয়া নিজে গান করতেন, গান লিখতেন, কবিতা ভালোবাসতেন এবং লিখতেন। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ- ‘অনেক দেরিতে’।
জাতীয় পর্যায়ে ভাসানী ন্যাপের রাজনৈতিক অবস্থান দূর্বল হয়ে যাওয়ার পর সামাজসেবামূলক কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। ২০০৯ সালে জাহিদ হোসেন মুসার নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করে জাহেদী ফাউন্ডেশন নামে একটি সমাজসেবামূলক সংস্থা। যার মাধ্যমে নারী শিশু ও দুস্থদের জন্য খাদ্য কর্মসূচি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে।
২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর বর্ষীয়ান এই ভাষাসংগ্রামী রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। মৃত্যুর আগঅবধি জাহিদ হোসেন মুসা রেডিয়েন্ট গ্রুপ অব কোম্পানিজ ও সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকালের সম্মানিত উপদেষ্টা ছিলেন।
বর্ণাঢ্য জীবনে নানা সামাজিক অবদান ও ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনস্বরূপ ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে তার নামে শোক প্রস্তাব উত্থাপনপূর্বক এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। তার কর্মময় জীবন ও অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ঝিনাইদহ পৌরসভার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নামকরণ করা হয় ‘ভাষাসৈনিক মুসা মিয়া সড়ক’।