Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

নিকৃষ্টতম কালো আইন

Icon

লোকমান হাওলাদার

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২২

নিকৃষ্টতম কালো আইন

প্রতীকী ছবি

দেশে মানুষকে গুম করার পর তাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য বিশেষ আইনি বিধান আছে। বিষয়টি অবাক করার মতো। বিশেষত আইনের এই বিধানগুলো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে জোরপূর্বক অন্তর্ধান করার জন্যেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যাকে সবাই গুম বলে প্রচার করছে।

বলছিলাম বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪-এর কথা। স্বাধীনতা-পরবর্তী দেশব্যাপী ভয়াবহ অরাজকতা, গুম, খুন, নিরাপত্তাহীনতা, সীমাহীন দুর্নীতি ও চোরাচালানে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন দেশের মানুষ। এরপর জনপদে নেমে এসেছিল ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। না খেয়ে প্রাণ গিয়েছিল অনেক মানুষের। ঠিক সেই সময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশে জারি করেছিলেন ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪’। যদিও বলা হয়েছিল, এই আইন চোরাচালানকারী ও মজুদদারদের নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু সেই আইনটি দেশের ‘নিকৃষ্টতম কালো আইন’ হিসেবেই সুপরিচিত। আইনের মারপ্যাঁচে একজন ব্যক্তিকে, স্পষ্ট করে বলতে গেলে সরকারের বিরোধিতাকারীদের বিনা বিচারে কথিত আইনের মারপ্যাঁচে দীর্ঘকাল আটক রাখায় এই কালো আইনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। জেনে অবাক হবেন এই আইনের ধারা-৯-এর অধীনে বিচারপতি কিংবা সমমান পর্যায়ের ব্যক্তিত্ব এবং সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিয়ে একটি উপদেষ্টা বোর্ড গঠন করে থাকে সরকার। যারা আটকের সম্পূর্ণ ব্যাপার তদারকি করে থাকেন। 

সংবিধান ও ফৌজদারি আইনে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার বিধান থাকলেও এই আইনে শুধু আটকের কারণগুলো সরকারের কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য সর্বোচ্চ ১৫ দিন সময় দিয়েছে। অর্থাৎ ১৪তম দিনের মধ্যেও আপনাকে আটকের খবর না জানালে কোনো সমস্যাই হবে না। গঠিত উপদেষ্টা বোর্ড সরকারের কাছে আটক ব্যক্তি সম্পর্কে প্রতি ১৭০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট করতে হবে। যদিও এই আইনে আটক ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়া অস্পষ্ট কিছু মেয়াদ উল্লেখ আছে, তা থাকলেও এই ব্যাপারে মানা হয় না। বরং এই ধারাতেই আইনের দোহাই দিয়ে গুম করে রাখা ব্যক্তিদের কথিত অপরাধের বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়। 

বিচারকার্যে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া প্রতিটি মানুষের অধিকার। তবে এই আইনের ধারা ১১(৪) অনুযায়ী, কথিত অপরাধীকে আইনজীবীর সাহায্য নেওয়া থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থাও আছে, যা স্পষ্টত মানব অধিকার লঙ্ঘন। ধারা-২৭ অনুযায়ী, অপরাধীর অনুপস্থিতিতেই শুধু এসআই পদমর্যাদার ব্যক্তির রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারবেন। 

এই ধারাতেই স্পষ্টত বোঝা যায় যে, এটা নিঃসন্দেহে কালো আইন, যা মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করে। এমনকি এই আইনের ধারা-৩৪-এর বিধানুসারে আটকের নাম করে গুমের মতো কর্মকাণ্ডের বিচার চেয়ে দেশের কোনো আদালতে কোনোরূপ প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। সবকিছুই আইনের অধীন জনকল্যাণে রাষ্ট্রের স্বার্থে সরল-বিশ্বাস হিসেবে বিবেচিত হবে। এমনকি এই আইনের ৩৪-ক ধারার অধীনে অপরাধীর বিচারের রায়ের পর শাস্তি নিশ্চিতে গুলি করে হত্যার বিধানও রাখা হয়েছে। তাই এই আইন সংস্কার করতে সব জায়গা থেকেই আওয়াজ তুলতে হবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে যেমন সবাই সরব আছেন, একই ভাবে নতুন বাংলাদেশের কল্যাণার্থে এই কথিত জনকল্যাণের নাম ভাঙিয়ে মানবতাবিরোধী গুমের মতো নিকৃষ্ট কাজকে বৈধতা দেওয়া এই কালো আইনে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন, পরিমার্জন এবং প্রয়োজনে বিশেষ অংশ বাতিল করা আবশ্যক। দেশের আইন হোক অপরাধীর শুদ্ধি লাভের।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫