
শহীদ ডা. মিলন। ছবি: সংগৃহীত
শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল ২৭ নভেম্বর। ১৯৯০ সালের এই দিনে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানে চিকিৎসক নেতা ডা. মিলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে সামরিক জান্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন। ডা. মিলনের আত্মদানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নতুন গতি সঞ্চারিত হয়। ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসনের পতন ঘটে।
১৯৯০ সালে এরশাদ স্বৈরশাসকের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে চলছিল গণ-আন্দোলন। সেই অভিযাত্রায় ঢাকা শহর পরিণত হয়েছিল মিছিলের নগরীতে। অন্যান্য সংগঠনের মতো চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনও (বিএমএ) তখন অগণতান্ত্রিক সামরিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। চিকিৎসকদের ২৩ দফার আন্দোলন যখন চলছিল ঠিক তখনই সামরিক স্বৈরাচারের দোসরদের সহায়তায় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল গণবিরোধী স্বাস্থ্যনীতি। এর বিরুদ্ধে বিএমএর নেতৃত্বে ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে সারা দেশে চলছিল চিকিৎসকদের কর্মবিরতি। ২৭ নভেম্বর ১৯৯০, তৎকালীন পিজি হাসপাতালে চলছিল বিএমএ আহূত চিকিৎসক সমাবেশ। এতে যোগদানের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে রিকশাযোগে শাহবাগের পিজি হাসপাতালের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন বিএমএর যুগ্ম সম্পাদক ডা. মিলন ও মহাসচিব ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।
পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিসংলগ্ন টিএসসি মোড় অতিক্রমের সময় তাদের রিকশা লক্ষ্য করে গুলি চালায় সামরিক জান্তার পেটোয়া বাহিনী। তাদের ছোড়া গুলি লাগে ডা. মিলনের বুকে। গুলিবিদ্ধ ডা. মিলন রিকশা থেকে লুটিয়ে পড়েন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে তিনি সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। সেই থেকে প্রতি বছর বিভিন্ন রাজনীতিক দল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনটি শহীদ ডা. মিলন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
শহীদ ডা. মিলনের পুরো নাম শামসুল আলম খান মিলন। তার জন্ম ১৯৫৭ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায়। তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে সেখানেই ফিজিওলজি অ্যান্ড বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি ওই পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ডা. মিলন একজন রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তি ছিলেন। ছাত্রজীবনে জাসদ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন। পাশাপাশি ছিলেন বাংলাদেশের পেশাজীবী আন্দোলনের একজন দক্ষ সংগঠক। বাংলাদেশের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের উজ্জ্বল মুখ ডা. মিলন আজও যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অনুপ্রেরণা।