
কয়েকদিনের মধ্যে প্রধান বিচারপতি প্র্যাকটিস নির্দেশনা জারি করে ভার্চুয়াল আদালত ব্যবস্থা চালু করে দেবেন বলে আশা প্রকাশ করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আমার মনে হয় যে, এই আইনটা একটা যুগান্তকারী আইন। বাংলাদেশের একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা আইন।’
রবিবার (১০ মে) ভিডিও বার্তায় ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
শনিবার (৯ মে) করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ভিডিও কনফারেন্সিং ও অন্যান্য তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিচার কাজ পরিচালনার জন্য ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ জারি করে সরকার। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৭ মে) মন্ত্রিসভা বৈঠকে অধ্যাদেশের খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করা। সেই কাজ তিনি ১৯৯৬ সাল থেকেই শুরু করেছিলেন। তার উদ্দেশ্য এই ডিজিটাল বাংলাদেশের আওতায় সব অফিস আদালত এসে যাবে। সারা বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে যেরকম অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশে ঠিক সে রকমভাবে অগ্রগতি হবে।’
তিনি বলেন, ‘সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু করা হয়েছিল। ই-জুডিসিয়ারি করার জন্য একটা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। সেই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাচ্ছিল। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের প্রকোপে সীমিতভাবে আদালত খোলা থাকলেও আদালতের সব কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাই এই ভার্চুয়াল কোর্ট করে বিচার কাজ চালিয়ে যাওয়ার যে আমাদের উদ্দেশ্য এবং ডিজিটালি যেটার করার পরিকল্পনা ছিল, সেটাকে এগিয়ে এনে ভার্চুয়াল কোর্ট আরো আগেই তৈরি করার একটা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’
‘এই পদক্ষেপের সবচেয়ে বড় কাজটা হলো- এই পদক্ষেপকে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আনার জন্য একটা আইন প্রয়োজন। এজন্য ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০, গতকাল জারি করা হয়েছে। অধ্যাদেশে পাঁচটি ধারা আছে এবং মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- আদালত কর্তৃক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিচারের কার্যক্রম পরিচালনা করা।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে কী কী বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এই অধ্যাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট এবং নিম্ন আদালতগুলোকে মামলার বিচার বা বিচারিক অনুসন্ধান বা দরখাস্ত বা আপিল শুনানি বা সাক্ষ্যগ্রহণ বা যুক্ততর্ক গ্রহণ বা আদেশ বা রায় দেয়ার ক্ষমতা দিয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘অধ্যাদেশে বলা আছে এই ক্ষমতাগুলো প্রয়োগ করবে প্রধান বিচারপতির একটি প্র্যাকটিস নির্দেশনার মাধ্যমে। প্র্যাকটিস নির্দেশনার প্রয়োজনীয়তার কারণ হচ্ছে, এখন আমাদের বিচারিক আদালতে সাংবিধানিকভাবে বিচারকার্য বিশেষভাবে ফৌজদারি বিচারকার্য চালানোর জন্য সশরীরে আসামি, সাক্ষী এবং আইনজীবীদের উপস্থিতি প্রয়োজন। দেওয়ানি মামলাও কিছু কিছু জায়গায়, যেমন সাক্ষীর উপস্থিতি সশরীরে প্রয়োজন।’
আনিসুল হক বলেন, ‘সেক্ষেত্রে এই অধ্যাদেশের একটি ধারায় বলা হয়েছে- এই ভার্চুয়াল উপস্থিতি সশরীরে আদালতে উপস্থিতি হিসেবে গণ্য হবে। এ কারণেই ফৌজদারি কার্যবিধি কিংবা দেওয়ানি কার্যবিধি কিংবা অন্য যে কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, এই অধ্যাদেশ ধারা সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশন, হাইকোর্ট ডিভিশন ও প্রধান বিচারপতির প্র্যাক্টিস ডাইরেকশনের মাধ্যমে কার্যপ্রণালি সেট করে দিয়ে বিচারকার্য চালাতে পারবেন।’
‘আমার মনে হয় প্রধান বিচারপতি কয়েকদিনের মধ্যেই এ রকম প্র্যাকটিস ডাইরেকশন দিয়ে এই আদালতগুলো চালু করে দেবেন।’
সাক্ষ্য আইন সংশোধন হওয়ার পর এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিচারকার্য শুরু করা যাবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তখন আমাদের নিম্ন আদালত এবং বিচারিক আদালত এই মাধ্যম ব্যবহার করে ট্রায়াল, সাক্ষ্যগ্রহণ এবং আর্গুমেন্ট শুনতে পারবে এবং রায় প্রদান করতে পারবে। প্র্যাকটিস নির্দেশনার মাধ্যমে কার্যবিধি ঠিক করে দিয়ে অন্যান্য মামলার শুনানি গ্রহণ করতে পারবে।’
প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার প্রশ্ন এসেছে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘আমি এটা বলতে পারি, এই ব্যাপারে অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। কারণ, কাজ শুরু করা হয়নি। যখন আমরা এই অধ্যাদেশ করার জন্য চিন্তা-ভাবনা করছিলাম, তখন পাশাপাশি একটা প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়েছে। যার আওতায় বিজ্ঞ বিচারক এবং বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়েছেন। আমার মনে হয়, যে প্রশিক্ষণ তারা পেয়েছেন সেই প্রশিক্ষণের কারণে তারা স্বল্পপরিসরে জামিন শুনানি এবং যেসব মামলায় এখন শুনানি করতে পারবেন বলে আগে বলেছি সেইগুলোতে কাজ করতে পারবেন।’
আইনমন্ত্রী আরো বলেন, ‘কিছুদিন আগেও আমি দেখেছি যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এখন করোনাভাইরাসজনিত কারণে এই ভার্চুয়াল কোর্ট বসিয়ে তাদের আদালত পরিচালনা করার চিন্তাভাবনা করছে। সেক্ষেত্রে বলতে পারেন, আমরা খুব একটা পিছিয়ে নেই।’