Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

বাবার সম্পত্তি বোনদের না দিলে করণীয়

Icon

লোকমান হাওলাদার

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:০৭

বাবার সম্পত্তি বোনদের না দিলে করণীয়

প্রতীকী ছবি

আমেনা বেগমের (ছদ্মনাম) মা মারা গেছেন বছর হয়ে গেছে। বাবা মারা গেছেন প্রায় চার বছর আগে। মা-বাবা জীবিত থাকতেই আমেনার বিয়ে হয়ে যায়। তার বড় এক ভাই এবং ছোট এক ভাই আছেন। আমেনার বাবা অনেক সম্পত্তি রেখে গেছেন। গ্রামে বসতভিটা, কৃষিজমি ও পুকুর রয়েছে। এ ছাড়া শহরে একটি বাড়ি আছে। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে ভাইয়েরা সেই সম্পত্তি ভোগদখল করে আসছেন। মা মারা যাওয়ার পর সব সম্পত্তি দুই ভাই নিজেদের মতো ভাগ করে নিয়েছেন। আমেনাকে কোনো সম্পত্তির ভাগ দেননি। আমেনা ভাইদের কাছে সম্পত্তির ভাগ দাবি করলে তারা কোনো সদুত্তর দেন না। তারা সম্পত্তির বদলে কিছু টাকা-পয়সা নেওয়ার কথা বলেছেন; কিন্তু সালেহা এতে রাজি হননি। তিনি উত্তরাধিকার অনুযায়ী সম্পত্তির ভাগ চান। 

মুসলিম আইনে নারীদের উত্তরাধিকার স্বীকৃত এবং সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে। এ অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা হলে বাংলাদেশে প্রচলিত মুসলিম আইনানুযায়ী যথাযথ প্রতিকার পেতে পারেন। মুসলিম আইনানুযায়ী বাবা কিংবা মা মারা যাওয়ার পর যদি মৃত ব্যক্তির ছেলে এবং মেয়ে উভয়ই থাকে, তাহলে তাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে ছেলেরা যা পাবেন, মেয়েরা তার অর্ধেক পাবেন। ভাইয়েরা ইচ্ছা করলেই বোনদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে বোনের বিয়ে হয়েছে কী হয়নি, সেটি বিবেচ্য নয়। তবে এমন বঞ্চিত করার ঘটনা আমাদের সমাজে প্রায়ই দেখা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বোনদের সম্পত্তির অংশ দিতে ভাইদের একটু অনীহা থাকে। বাবা বা মায়ের সম্পত্তি শুধু ছেলেরাই ভোগ করবে, বোনদের দেবে না, এটা আইনসম্মত নয়। বাবা বা মায়ের রেখে যায় সম্পত্তিতে ছেলে ও মেয়ের উভয়ের অধিকার রয়েছে। উভয়েই এ সম্পত্তির প্রাপ্য হবেন। কোনো অবস্থায়ই ভাইয়েরা বাবা বা মায়ের সম্পত্তি থেকে বোনদের বঞ্চিত করতে পারেন না। অনেকে অজ্ঞতার কারণে, আবার অনেকে ভাইদের সঙ্গে কোনো ঝামেলা হবে ভেবে প্রাপ্য অংশটুকু ছেড়ে দিতে দেখা যায়। 

আমেনা বেগম যেহেতু তার সম্পত্তির ভাগ ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন না, তাই তিনি সম্পত্তির অংশ ফিরে পেতে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন। যেহেতু আমেনা বেগমের মা-বাবা দুজনই মারা গেছেন, তাই তার প্রথম কাজ মা-বাবার সম্পত্তি কী আছে তার একটি তালিকা করা। এরপর ভাই-বোনেরা আলোচনা করে নিজেদের মধ্যে আপস করে বণ্টননামা সম্পন্ন করে নিতে পারেন। যদি আপসের মাধ্যমে ভাইয়েরা আমেনার সম্পত্তি দিতে না চান কিংবা তার সম্পত্তি কম দিতে চান, তাহলে তিনি দেওয়ানি আদালতে আশ্রয় নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আমেনা বেগমকে বাঁটোয়ারা বা বণ্টনের মোকাদ্দমা করতে হবে। কোনো যৌথ সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলেও কে কতটুকু অংশ পাবে, তা আদালতের মাধ্যমে নির্ধারণের জন্য বাঁটোয়ারা মামলা করতে হয়। সাধারণত বিরোধ দেখা দেওয়ার ছয় বছরের মধ্যে মামলা করতে হয়। 

এই মোকদ্দমা চলাকালে কেউ মারা গেলে তাদের উত্তরাধিকারীরা অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন এবং অংশ চাইতে পারেন। এ মামলায় দুইবার ডিক্রি হয়। প্রাথমিক ডিক্রি হওয়ার পর বা আগে নির্ধারিত সময়ে নিজেদের আপস-মীমাংসা করে নেওয়ার সুযোগ আছে। আর আপস-মীমাংসা যদি হয়ে যায় তবে বণ্টননামা রেজিস্ট্রি করে নিতে হবে। এই বণ্টননামা দাখিল করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ড অফিস থেকে নামজারি করে নেওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। 

বাংলাদেশে বর্তমানে যে মুসলিম আইন প্রচলিত আছে, সেখানে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করার কোনো সুযোগ নেই। আমেনা বেগম যদি তার সম্পত্তির অংশ উদ্ধার না করে মারা যান, তাহলে তার সন্তান সেই উত্তরাধিকার দাবি করতে পারবেন এবং মামলায় পক্ষ হয়ে অধিকার আদায় করতে পারবেন। মনে রাখতে হবে উত্তরাধিকারের অধিকার কখনো তামাদি হয় না।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫