১৯৭১-এ ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া শামসুর রহমান কান্দু

ওয়ালিউর রহমান বাবু
প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫:০১

শামসুর রহমান কান্দু। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী মহানগরীর কাজলা কেডি মোড়ের শামসুর রহমান কান্দু তখন সামর্থ্যবান পুরুষ। ছিলেন রাজশাহীর তৎকালীন পৌরসভার ওয়ার্ড কমিশনার। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন- এটাই হয়েছিল তার জন্য কাল। রাজনৈতিক সংগঠন ন্যাপের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি আগস্ট মাসের শেষ দিকে খুব ভোরে পাকিস্তানি সেনারা তাদের সমর্থকদের ইন্ধনে বাড়ি ঘেরাও করে পরিচিত একজনকে দিয়ে তাকে ডাকেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছেন। তিনি অস্বীকার করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
এক পর্যায়ে তার স্ত্রী রাহাত আরা রহমান কাজল ব্যাপারটি অস্বীকার করে বলেন, বাড়ির ভেতর সার্চ করতে। পাকিস্তানি সেনারা পুরো বাড়ি সার্চ করে কিছু না পেয়ে তাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হলে ধরে নিয়ে গিয়ে অকথ্য নির্যাতন করে। দড়ি দিয়ে বেঁধে মাথা নিচে পা উপরে করে ঝুলিয়ে দিলে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। এক দিন পর তার জ্ঞান ফিরে আসে।
বন্দি অবস্থায় তাকে তেমন খাবার দেওয়া হয়নি। হয়ে পড়েন চরম অসুস্থ। কৌশলে তাকে সেবা দেওয়ার জন্য তার পরিচিত হাসু নামের একজন, ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ নিয়ে হোমিওপ্যাথি ডাক্তার মজির উদ্দিনের দেওয়া ওষুধ পৌঁছে দিতে থাকেন তার কাছে। শামসুর রহমান কান্দুর স্ত্রী তাকে মুক্ত করতে বহুজনের কাছে ধরনা দিয়ে ব্যর্থ হন। শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আয়েন উদ্দিনও এড়িয়ে যান। শামসুর রহমান কান্দুর স্ত্রী রাহাত আরা রহমান কাজল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড. বারীর সঙ্গে দেখা করলে তিনি তার মুক্তি ও জীবন রক্ষার আশ্বাস দেন। ঢাকায় গিয়ে সেনাবাহিনীর উচ্চ মহলে বিষয়টি জানালে তাদের নির্দেশে জোহা হল বন্দিশালার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা তাকে ছেড়ে দেয়। নির্যাতনে পা ভেঙে যাওয়ায় তিনি হাঁটতে না পারলে অন্যরা তাকে ঘাড়ে করে কাজলা মোড়ে এনে আনসার মুহুরির বাড়ির বারান্দায় বসিয়ে দিয়ে চলে যায়। খবর পেয়ে স্বজন ও অন্যরা তাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনে। বর্তমানে তিনি স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। এত বছর পরেও তার পা ঠিক হয়নি। দড়ি দিয়ে পা বেঁধে সব সময় বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়। তার স্ত্রী রাহাত আরা রহমান কাজল জানান, যাদের দায়িত্ব ছিল তারা এত বছরেও কেউ তেমন খবর নেয়নি। সব কিছু জেনেও তারা এড়িয়ে যায়, যা খুবই দুঃখজনক। তিনি কোনো সাহায্য বা সহানুভূতির আশা করেন না। কিন্তু স্বাধীনতার জন্য যে মানুষটি নির্যাতিত হলেন তার সঙ্গে এ অবহেলা তাকে খুব কষ্ট দেয়।
বিশেষ দিনগুলোতে কেউ কেউ আসেন, নানা কথা বলেন। কিন্তু বারবার একই কথা বলতে তার ভালো লাগে না। তবে দেশের স্বাধীনতার জন্য শামসুর রহমান কান্দুর অবদানের জন্য তার পরিবার গর্বিত। তবে যারা দেশের জন্য সত্যিকার অর্থে কাজ করেছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, আজও কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করছেন, তাদের মূল্যায়ন কবে হবেÑএ প্রশ্ন তার পরিবারের।
তথ্যসূত্র : শামসুর রহমান কান্দুর স্ত্রী রাহাত আরা রহমান কাজল