
নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর জানা গেছে, জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার (১৪ মে) রাতে আনিসুজ্জামানের ছেলে আনন্দ জামান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আনন্দ জামান বলেন, ‘করোনা টেস্ট পজিটিভ এসেছে। এখন লাশ দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কিছু প্রক্রিয়া আছে সেগুলো ফলো করা হবে। আমাদের দাদা-দাদির কবর আজিমপুরে। তাই আমাদের চাওয়া তাদের কবরের পাশেই বাবাকে যেন দাফন করা হয়। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। পূর্বঘোষিত কোনো কর্মসূচি পালন করা হবে না।’
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৪) বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ড. আনিসুজ্জামানের মৃত্যু হয়।
গত ২৭ এপ্রিল হৃদরোগ সমস্যার পাশাপাশি কিডনি ও ফুসফুসে জটিলতা, পারকিনসন্স, প্রোস্টেটের সমস্যা ও রক্তে সংক্রমণের সমস্যা নিয়ে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে রাজধানীর ইউনিভার্সেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের চিফ কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক খন্দকার কামরুল ইসলামের অধীনে করোনারি কেয়ার ইউনিটে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এরপর গত শনিবার অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এর আগে ফুসফুসের সংক্রমণসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তারও আগে দেশের বাইরে গিয়ে কয়েকবার চিকিৎসা নেন তিনি।
জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ভারত ভাগের পর তার পরিবার এপার বাংলায় চলে আসে। তিনি ছয় দশকেরও বেশি সময় শিক্ষকতা পেশার সাথে জড়িত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার আগে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনসহ পরবর্তী প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাথে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। এছাড়া ধর্মান্ধতা ও মৌলবাদবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডে সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব আনিসুজ্জামানের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে।
আনিসুজ্জামানের উল্লেখযোগ্য রচনাবলির মধ্যে ‘স্মৃতিপটে সিরাজুদ্দীন হোসেন’, ‘শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ স্মারকগ্রন্থ’, ‘নারীর কথা’, ‘মধুদা, ফতোয়া’, ‘ওগুস্তে ওসাঁর বাংলা-ফারসি শব্দসংগ্রহ’ ও আইন-শব্দকোষ অন্যতম।
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, অলক্ত পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রিতে ভূষিত হয়েছেন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘পদ্মভূষণ’ পেয়েছেন।
সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তাকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়।