করোনা চিকিৎসায় ঢাকা মেডিকেলে প্লাজমা থেরাপি শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ মে ২০২০, ১৯:২০

করোনার চিকিৎসায় ঢাকা মেডিকেলে শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে প্লাজমা থেরাপি। এতে করোনা থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তির রক্তের প্লাজমা নিয়ে দেয়া হবে আক্রান্ত রোগীকে। এ জন্য প্লাজমা ব্যাংক তৈরিতে কাজ করছে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট।
এই পদ্ধতিতে জটিল করোনা রোগীদের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ৮০ ভাগ, বলছেন চিকিৎসকেরা।
শুক্রবার (১৫ মে) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ খান এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
অধ্যাপক ডা. এম এ খান বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, প্লাজমা থেরাপি এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা। আমি গতকাল রাতে আমেরিকার একজন হেমাটোলজিস্টের সঙ্গে কথা বলছিলাম। তিনি একটি হাসপাতালের দায়িত্বে আছেন। ওই হাসপাতালে মোট ২৩ জনকে প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হয়েছে। এদের ভেতরে অবস্থার উন্নতি হয়েছে ২১ জনের। বাকি দুজনের অবস্থা আগের মতো আছে। সেজন্য আমরাও বৃহৎ আকারে প্লাজমা থেরাপির কথা চিন্তা করছি।’
তবে বাংলাদেশে প্লাজমা থেরাপির ঘটনা কিন্তু এটাই প্রথম নয়। এর আগে গত ৪ এপ্রিল প্রথম প্লাজমা থেরাপির কার্যক্রম শুরু করেন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল। হাসপাতালের হেমাটোলজি অ্যান্ড স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগের কোঅর্ডিনেটর ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ জানান, তিনিই দেশে প্রথম প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করেছেন। এবং থেরাপি প্রয়োগ করা সেই রোগী এখন অনেকটাই সুস্থ আছে বলে দাবি তার।
ডা. এম এ খান বলে, ‘এভারকেয়ার হাসপাতাল প্রথম বাংলাদেশে প্লাজমা থেরাপি শুরু করে। তারা একজন ৬৫ বছর বয়সী করোনা রোগীর শরীরে প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করেন। তিনি এখন অনেকটা সুস্থ। তাঁকে আইসিইউতে থেকে বেডে নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এটা ভালো ফল বয়ে আনবে বলে আমরা বিশ্বাস রাখছি। শরীরের এন্টিবডি চেক করার জন্য আমরা চারটি কিট কিনেছি ফ্রান্স থেকে। আগামী রোববারের ভেতরে কিট আমরা পেয়ে যাব। চারটি কিটের দাম পড়েছে ছয় লাখ টাকা। প্রতিটা কিটে ৯৬ জনের এন্টিবডি চেক করা যাবে। কিট হাতে পেলেই আমরা আমাদের কার্যক্রম শুরু করবো।’
তবে ডা. এম এ খান বলেন, ‘এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ডোনার পাওয়া। সেজন্য প্লাজমা থেরাপি করা বেশ ঝামেলাযুক্ত। আবার এই পদ্ধতিতে করোনায় আক্রান্ত রোগীকে বাঁচানো সহজ। সেজন্য গণমাধ্যম ও সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে মানুষকে সচেতন করার। যাতে করোনাযুদ্ধে সুস্থ হয়ে উঠা রোগী আরেকজন রোগীর জীবন বাঁচাতে প্লাজমা ডোনেট করতে চান।’
গত ৪ এপিল একজন করোনাজয়ী রোগীর শরীর থেকে ৪০০ এমএল প্লাজমা গ্রহণ করেন এভারকেয়ার হাসপাতালের ডা. আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ। তিনি বলেছিলেন, ‘ওই ৪০০ এমএল প্লাজমা আইসিইউতে থাকা ৬৫ বছর বয়সী রোগীর শরীরের ২০০ এমএল করে দুই দিনে প্রয়োগ করা হয়েছে। এরপর থেকে ওই রোগী সুস্থ হতে শুরু করেছেন। তার শরীরের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছিলেন না। এই থেরাপি দেওয়ার পর তিনি আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছেন। এখন তাকে আইসিইউ থেকে কেবিনে রাখা হয়েছে। তবে কত এমএল প্লাজমা প্রয়োজন হবে তা কিন্তু ব্যক্তি বিশেষের উপর নির্ভর করবে।’