Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

অনলাইন জুয়া ও আইন

Icon

লোকমান হাওলাদার

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:৩৪

অনলাইন জুয়া ও আইন

প্রতীকী ছবি

অনলাইন জুয়া বর্তমান সময়ে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ইসলাম ধর্ম ও দেশের আইনে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ। তবে গ্রাম ও শহরে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার ফলাফল নিয়ে বাজি ধরে বিজয়ীকে অর্থ বা মূল্যবান বস্তু আদান-প্রদানের প্রচলন দেখা যাচ্ছে। জুয়ায় গুটিকয়েক লোক লাভবান হলেও বেশির ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লোভের ফাঁদে পড়ে বেশি লাভের আশায় শেষে নিঃস্ব হয়। এভাবে তরুণ প্রজন্মসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। 

বর্তমানে অনলাইনে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে জুয়ার ফাঁদ পাতা হয়। লোভ দেখানো হয় এক দিনেই লাখপতি হওয়ার। ঘরে বসেই যদি লাখ লাখ টাকা উপার্জন করা যায়, তবে ক্ষতি কি, এমন ধারণা থেকেই এসব জুয়া খেলার সাইটে যুক্ত হয়ে সর্বস্ব হারাতে হচ্ছে। জুয়ার সাইটে যুক্ত হতে প্রথমেই দিতে হয় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ। সেই টাকায় ডিজিটাল কয়েন কিনে ধরতে হয় ‘বাজি’। প্রথম দিকে বাজির টাকায় যখন দুই-তিন গুণ টাকা ফেরত আসে, তখন বাড়তে থাকে লোভ। যেভাবেই হোক আরো টাকা জোগাড় করে আবার ধরা হয় বাজি। কিন্তু হেরে গেলে সব টাকাই জলে। তখন টাকা উদ্ধারের জন্য আরো টাকা জোগাড় করে বাজি ধরার চক্রে পড়ে নিঃস্ব হতে হয়। বাংলাদেশের 

১৯৭২-এর সংবিধানে জুয়া খেলা নিরোধ করা হয়। সংবিধানের ১৮(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘গণিকাবৃত্তি ও জুয়া খেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে, তার কোনো সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনেও জুয়া খেলা অবৈধ। কিন্তু এ আইন ১৮৬৭ সালে অর্থাৎ ব্রিটিশ আমলে প্রণীত এবং এতে সাজার পরিমাণও খুব নগণ্য। পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট ১৮৬৭, সেকশন ৩ অনুযায়ী, যেকোনো ঘর, স্থান বা তাঁবু জুয়ার আসর হিসেবে ব্যবহৃত হলে তার মালিক বা রক্ষণাবেক্ষণকারী, জুয়ার ব্যবস্থাপক বা এতে কোনো সাহায্যকারী তিন মাসের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ২০০ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট, ১৮৬৭ সেকশন ৪ অনুযায়ী, কোনো ঘরে তাস, পাশা, কাউন্টার বা যেকোনো সরঞ্জামসহ কোনো ব্যক্তিকে জুয়া খেলারত বা উপস্থিত দেখতে পাওয়া গেলে তিনি এক মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১০০ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। এই আইন প্রকাশ্য জুয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং দণ্ডবিধি বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে উপযোগী নয়।

তবে জুয়া প্রতিরোধে নতুন আইন করছে সরকার। এ জন্য নতুন ‘জুয়া আইন, ২০২৩’-এর খসড়া করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। মূলত ১৮৬৭ সালের ‘দ্য পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট’ যুগোপযোগী করে নতুন আইনটি করা হচ্ছে। খসড়া আইনে জুয়ার শাস্তি সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। আগের আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল ২০০ টাকা জরিমানা ও তিন মাসের জেল। তবে এরপরও আইন প্রয়োগ করে অনলাইন জুয়া বন্ধ করা বেশ কঠিন। কারণ ডিজিটালাইজেশনের ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত জুয়া খেলা পৌঁছে গেছে। এখন বাড়িতে বসেই জুয়া খেলা যায়। তাই আইন প্রয়োগ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

অনলাইন জুয়া প্রতিরোধের জন্য পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তবে বিটিআরসি নিয়মিত তদারকি করে জুয়ার সব সাইট বন্ধ করে দিতে পারে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন- ফেসবুক, ইউটিউবে কোনো কোনো কনটেন্ট দেখতে গেলে বিভিন্ন জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপন চলে আসে। ফলে যারা এ সম্পর্কে জানে না, তারাও এতে জড়িত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সব বেটিং সাইটের প্রমোশন বন্ধ ও সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫