‘আমরা চেষ্টা করেছি’, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর গুঁড়িয়ে দেওয়া নিয়ে প্রশ্নে ডিএমপি কমিশনার

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭:৪৬

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। ছবি: সংগৃহীত
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুরের সময় গভীর রাত পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ এই বাড়িটি রক্ষায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উঠা প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন বৃহস্পতিবার।
রাজধানীতে কাউন্টার ভিত্তিক বাস সার্ভিস উদ্বোধনে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গিয়েছিলেন উত্তরায়। সেখানে তিনি এক গণমাধ্যমকর্মীর প্রশ্নের মুখে পড়েন।
বুধবার শেখ হাসিনা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে ছাত্র জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বলে ঘোষণা আসার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজ থেকে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাড়িটি ভাঙার পাল্টা ঘোষণা আসে। জানানো হয়, রাত ৯ টায় বুলডোজার নিয়ে গিয়ে বাড়ি ভেঙে দেওয়া হবে।
এ দিন বিকেলে ইউটিউবার ইলিয়াস ও পিনাকী ভট্টাচার্য ফেসবুকে ‘ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিল’ ঘোষণা করেন। এ কর্মসূচির কারণে ধানমণ্ডি এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলা হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন কোনো অবস্থান ওই এলাকায় দেখা যায়নি।
তবে ভাঙচুর শুরু হয় রাত আটটায়। কয়েক হাজার মানুষ শুরুতে হাতুড়ি ও শাবল দিয়ে এসে বাড়িটির বিভিন্ন অংশ খুলে আগুনে ধরিয়ে দেয়।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরপরই বাড়িটিতে আগুন দেওয়া হয়। লুট করা হয় মূল্যবান ও ঐতিহাসিক নানা স্মারক। হামলাকারীরা বাড়ির দরজা, জানলার ফ্রেম থেকে শুরু করে ৫ আগস্ট বেঁচে যাওয়া জিনিসপত্র খুলে নিতে শুরু করে। পরে গভীর রাতে আসে ক্রেন, এক্সকেভেটর।
রাতে একদল সেনা সদস্য বাড়িটিতে এলেও কিছুক্ষণ পর তারা ফিরে যায়। ফলে ভাঙচুরকারীরা বলতে গেলে বিনা বাধায় তাদের কাজ করতে থাকে।
সকাল থেকে আবার শুরু হয় ভাঙচুর। সারাদিনে বাড়িটির প্রায় পুরোটিই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
এমন ঘটনা ঠেকাতে পুলিশের কী উদ্যোগ ছিল- এমন প্রশ্ন ছিল এক সংবাদকর্মীর।
জবাবে তিনি বলেন, “আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি, আমরা চেষ্টা করেছি।”
সেখানে সংবাদ সংগ্রহের সময় সাংবাদিকদের ওপরে হামলার বিষয়ে জবাব চাওয়া হয় পুলিশ কমিশনারের কাছে।
“অনেক রাত পর্যন্ত আমি এটা মনিটরিং করছি। আপনি যেটা সাংবাদিকদের ওপর হামলার কথা বলেছেন, আমার কাছে সেটা রিপোর্টিং হয়নি। রাত দুইটা-আড়াইটা পর্যন্ত আমার কাছে এই ধরনের কোনো খবর নাই। ইভেন সকালেও আমাকে কেউ বলে নাই। আপনি আমাকে এখন জিজ্ঞেস করলেন, এখন খোঁজ নিয়ে দেখি।”
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ৫ নম্বরে স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনও পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
ঢাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলা শহরেও আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনায় হামলা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের নামফলক খুলে ফেলা হচ্ছে, ভেঙে দেওয়া হচ্ছে ম্যুরাল।
অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে এক বিবৃতিতে এসব ঘটনাটে শেখ হাসিনার ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।