জাতিসংঘের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ
হাসিনার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:০৩

হাসিনার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ। ফাইল ছবি
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকার ও সেই সময়ের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল।
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
১১৪ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে ওই সময়ের নৃশংসতা ও মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য বিগত সরকার ও শাসক দল আওয়ামী লীগকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বৈরাচারী সরকার নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে যুক্ত করে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে। বিচার বহির্ভূত হত্যা, নির্বিচার মারণাস্ত্র দিয়ে গুলি, গ্রেপ্তার, নির্যাতন, চিকিৎসা পেতে বাধা দেওয়ার মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে সরকার। মূলত ক্ষমতায় টিকে থাকতে আন্দোলনকারীদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আন্দোলনকারী ও বিরোধী মত দমনের কৌশল হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বিত দিকনির্দেশনায় মানবতা বিরোধী এসব অপরাধের ঘটনা ঘটেছে।
আন্দোলনের সময় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তর (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেল (এনটিএমসি), পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি), পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি), কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের মতো সংস্থাগুলো আন্দোলনকারীদের সহিংসভাবে দমনের মাধ্যমে সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।
ওএইচসিএইচআরের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনটি গতকাল বুধবার জেনেভা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রতিবেদনের খসড়া দিয়েছিল। কোনো মতামত থাকলে তাতে যুক্ত করার জন্য সময়সীমা দেয় ওএইচসিএইচআর।
জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী দল প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বগুড়া, সিলেট ও গাজীপুর—এই আট শহরে অনুসন্ধান চালায়।
মূলত যে শহরগুলোতে বেশি মাত্রায় বিক্ষোভ হয়েছিল, সেসব স্থানে গিয়ে সরেজমিনে কাজ করে জাতিসংঘের দলটি। প্রতিবেদন তৈরিতে অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঘটনাপ্রবাহের সাক্ষী ব্যক্তিদের নিয়ে ২৩০টির বেশি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এ ছাড়া সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আরও ৩৬টি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এই ৩৬ জনের মধ্যে সরকারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারাও আছেন, যাঁরা ওই সময়ের ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে অবগত ছিলেন।