পুরনো শাসন কাঠামো রেখে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ অসম্ভব: নাহিদ ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৫, ১১:৩১

স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নাহিদ ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত।
পুরনো সংবিধান ও শাসন কাঠামো রেখে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, “একটি একদলীয় সংবিধানের মাধ্যমে ফ্যাসিজম ও একদলীয় স্বৈরতন্ত্রের বীজ বপন করা হয়েছিল। আমাদের নতুন প্রজাতন্ত্র গড়তে হবে। তার জন্য একটি নতুন সংবিধান ও গণপরিষদ নির্বাচন প্রয়োজন।”
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির যৌথ উদ্যোগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ হয়। এরপর শনিবার গভীর রাতে ২১৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। আত্মপ্রকাশের চার দিন পর আজ সাভারে একাত্তরের বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে যায় নতুন দলটি। ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর পর দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
এনসিপির কার্যক্রম শুরুর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আজ থেকে আমাদের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলো। আমাদের এই ভূখণ্ডের মানুষের যে লড়াইয়ের ইতিহাস রয়েছে, ১৯৪৭ সালের আজাদী লড়াই থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান এসব লড়াইয়ের আকাঙক্ষাকে ধারন করে আমরা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করব। সেই লক্ষ্যেই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কাজ করে যাচ্ছে।”
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেলেও আমাদের সার্বভৌমত্ব সবসময় হুমকির মুখে পড়েছে। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বারবার ভেঙে পড়েছে। আমরা একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান গড়ে তুলতে পারিনি। একটি একদলীয় সংবিধানের মাধ্যমে ফ্যাসিজম ও একদলীয় স্বৈরতন্ত্রের বীজ বপন করা হয়েছিল। আমরা বলেছি আমাদের নতুন প্রজাতন্ত্র গড়তে হবে। তার জন্য একটি নতুন সংবিধান ও গণপরিষদ নির্বাচন প্রয়োজন। সেই জায়গা থেকে আমরা সেকেন্ড রিপাবলিকের কথা বলেছি। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি যোগ করেন-নাহিদ।
চলতি মাসের মধ্যে দলের গঠনতন্ত্র প্রণয়নের কাজ শুরু হবে জানিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, “জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রথম লক্ষ্য দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম বিস্তৃত করা। তৃণমূলে সাংগঠনিক কার্যক্রম বিস্তৃত করা এবং নিবন্ধন নিতে যেসব শর্ত পূরণ করতে হয়, সেই শর্তগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে পূরণ করে নিবন্ধন কার্যক্রম আগানো। এ মাসের মধ্যে আমাদের গঠনতন্ত্র প্রণয়নের কাজ শুরু করব।”
এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসরাম বলেন, “গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বারবার দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। এবার যাতে আর দীর্ঘায়িত করা না হয়, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান যাতে ব্যর্থ না হয়, পুরনো সংবিধান ও পুরনো শাসন কাঠামো রেখে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়। কেবলমাত্র সরকার পরিবর্তন করেই জনগণের কল্যাণ করা সম্ভব নয়। প্রকৃত গণতন্ত্র বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।”
“সেজন্য আমরা বলছি যেহেতু ২৪ সালে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছে, আমরা কেবল সরকার পরিবর্তন নয় বরং শাসন কাঠামোসহ পুরো সাংবিধানিক পরিবর্তন করে নতুন একটি বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করতে চাই, যেখানে প্রকৃত গণতন্ত্র ইনসাফ সাম্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ফয়সালা করার আহ্বান জানান নাহিদ ইসলাম। বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানে সংগঠিত যে গণহত্যা তার বিচার দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর দেখতে চাই এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ফয়সালা বাংলার মাটিতে করতে হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমাদের প্রতিশ্রতি ছিল যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, যারা গত ১৫ বছরে নানা জুলুম করেছে তাদের বিচার এই বাংলার মাটিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই বিচার বাংলাদেশের মানুষ দেখতে চায়। এবং বিচারের পরে যে সংস্কার কার্যক্রম জাতীয় ঐকমত্য যে কমিশন রয়েছে দ্রুত জাতীয় সংলাপে গিয়ে জুলাই ঘোষণাপত্র দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চাই।”
এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হান্নান মাসুদসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।