Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

অন্তরঙ্গ ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেল করলে করণীয়

Icon

লোকমান হাওলাদার

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫২

অন্তরঙ্গ ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেল করলে করণীয়

প্রতীকী ছবি

তানিয়া আক্তার (ছদ্মনাম) ঢাকার বাইরের একটি নাম করা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। কিছুদিন আগে একটি ছেলের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার পরিচয়। একসময় দুজনে ফোনে কথা বলতে শুরু করে। ছেলেটি ঢাকার একটি কলেজের ছাত্র। মুঠোফোনে ও ভিডিও কলে কথা বলতে বলতে একসময় ছেলেটি মেয়েটিকে তার ব্যক্তিগত ছবি তুলে পাঠাতে বলে। ফোনে কথা বলতে বলতে ছেলেটি এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করে যে মেয়েটিও তাকে তৎক্ষণাৎ ছবি পাঠিয়ে দেয়। ছেলেটি মেয়েকে আশ্বাস দিয়েছিল, ছবি একবার দেখেই ডিলিট করে দেব। কিন্তু কিছুদিন পর ছেলেটি এই ছবি দিয়ে মেয়েকে ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করে। তার কাছ থেকে নানা রকম অবৈধ সুবিধা নিতে থাকে। মেয়েটিকে একাধিকবার ঢাকায় এসে তার সঙ্গে দেখা করতে বাধ্য করে। ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অনেক টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। মেয়েটি এখন ছেলেটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে চাইছে।

ব্ল্যাকমেলের শিকার হলে দণ্ডবিধি আইনে তার প্রতিকার রয়েছে। ছেলেটি যদি অনলাইনে কোনো ছবি প্রকাশ করে, তাহলে এ জন্য তাকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। তবে প্রথমে ছেলেটির সঙ্গে আলোচনা করে ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি তাকে ডিলিট করতে বলা যেতে পারে। যেহেতু ছেলেটি ব্ল্যাকমেলের মাধ্যমে মেয়েটির কাছ থেকে টাকা আদায় করছে; ১৮৬০ সালের দ-বিধির ৩৮৩ ধারা অনুযায়ী এ ধরনের ব্ল্যাকমেলকে চাঁদাবাজির আওতায় ফেলা যাবে। ৩৮৪ ধারা অনুযায়ী এর শাস্তি সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড।

ব্ল্যাকমেলিং একটি জঘন্য অপরাধ। দেশের প্রচলিত সব আইন সম্পূর্ণরূপে তানিয়া আক্তারের পক্ষে রয়েছে। তার দ্রুত কাছের থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা জরুরি। প্রয়োজনে জিডির কপি নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের হেডকোয়ার্টারে অবস্থিত সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। এ ছাড়া দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে পুলিশের ‘হ্যালো সিটি’ অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ দাখিল করে প্রতিকার চাইতে পারেন। যেহেতু সে ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে, তাই দ-বিধির ৫০৬ ধারা বলে সরাসরি আদালতেও অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। তবে জিডি করলে পুলিশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে নন-এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করতে পারে। 

জিডির পর পুলিশ যদি ঘটনার সত্যতা পায়, তাহলে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। ৫০৬ ধারার অধীন অপরাধমূলক হুমকির জন্য শাস্তি, দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হতে পারে। ছেলেটি মেয়েটিকে হুমকি দিয়ে এবং ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। যদি কোনো এক পক্ষ অর্থ বা সম্পদের জন্য প্রেম করে এবং বিশ্বাস অর্জনের পর অপর পক্ষের অর্থ বা সম্পদ হাতিয়ে নেয়, তাহলে বাংলাদেশে প্রচলিত দণ্ডবিধির ৪১৫ থেকে ৪২০ পর্যন্ত বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী তা প্রতারণা হিসেবে বিবেচিত হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারাতে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে কারো ওপর প্রভাব খাটিয়ে তার কোনো কিছু হাতিয়ে নেয় (তার সম্মতি থাকলেও), সেটা প্রতারণা হিসেবে গণ্য করা হবে। প্রতারণার জন্য সেই ব্যক্তি দণ্ডবিধির ৪১৭ ধারার অধীন এক বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বর্তমান সময়ে নারীদের সঙ্গে ব্ল্যাকমেলের ঘটনা অহরহ ঘটছে। তাই ইন্টারনেট ব্যবহারে সাবধান বা সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে টিনএজার সন্তানের মা-বাবাকেও সচেতন থাকতে হবে। সন্তান অনলাইনে অপরিচিত মানুষের সঙ্গে কথা বলছে কি না, কী কাজে সে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, এসব বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫