স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদচ্যুতি চায় শিক্ষক নেটওয়ার্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ১৭:০৫

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদচ্যুতি চায় ঢাবি শিক্ষক নেটওয়ার্ক
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলমের পদত্যাগ নয়, পদচ্যুতির দাবি করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনিম সিরাজ মাহবুব এই দাবি করেন।
রবিবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে এই দাবি করা হয়।
নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
সমাবেশে তাসনিম সিরাজ মাহবুব বলেন, “আমি গত চার মাস থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়েছি। এখন আমি তার পদচ্যুতি চাই। আর আইন উপদেষ্টা! তারা দুইজন কী করছেন? আমরা কেন একটি জবাবদিহিমূলক সরকার পাচ্ছি না?”
তিনি বলেন, “ধর্ষকদের ফাঁসি চাই বলব না, আমরা বলব ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। সেটি ফাঁসি হবে নাকি জনসমক্ষে অন্যকিছু করা হবে সেটি পরে সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সেগুলো নিশ্চিত করতে পারছে না কেন? তাহলে স্বৈরাচারী সরকারের হাত থেকে মুক্ত হয়ে আমরা কোনদিকে এগুলাম?”
তাসনিম সিরাজ বলেন, “আমাদের দুইজন নারী উপদেষ্টা আছেন। তারা কি আদৌ আছেন? দেশে কী হচ্ছে সেই ব্যাপারে তারা কি সচেতন? আজকে ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, আইন হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। আমরাও সেটি মানতে চাই, যদি এই দেশে আইনের শাসন থাকে। আপনারা আমাদের বাধ্য করলে আমরা কী করব? আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাচ্ছে।”
“যে দেশ নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না সেই দেশ কি আমার দেশ? আমি কি এইরকম দেশ চাই?” এই প্রশ্নও তোলেন অধ্যাপক তাসনিম সিরাজ।
সমাবেশে অংশ নিয়ে এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ধর্ষণের শাস্তির বিধান। ধর্ষণ কিংবা নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আলাদা বাহিনী গঠন করা হোক। এরকম আইন তৈরি করা হোক যেন সঙ্গে সঙ্গে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া যায়। সেই শাস্তি দিতে হবে যা ধর্ষকের মনে ভয় সৃষ্টি করবে।”
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক গীতি আর নাসরিন বলেন, “একজন দুর্বল পুরুষও তার বাসায় নির্যাতক হয়ে দাঁড়াতে পারে। নির্যাতকরা যখন যেদিকে সুবিধা পায় তারা সেটি ব্যবহার করে। তাই আমি কোন নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীকে দোষ দিতে চায় না। আমি সবাইকে দোষ দিচ্ছি।”
তিনি বলেন, “আপনারা যতক্ষণ না স্বীকার করবেন নির্যাতনের মনোবৃত্তি আপনারা মাইক্রোলেভেলে গৃহে বা সমাজে টিকিয়ে রাখছেন এবং কীভাবে এটি টিকিয়ে রাখা হয়— এটির বিরুদ্ধে যদি আপনি না দাঁড়ান তাহলে আপনি অন্য কাউকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন না। কারণ আপনি হয়তো ওই মুহূর্তে নির্যাতন করছেন না কিন্তু আপনি একটা নির্যাতক ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত, একটা অংশ।”
“কাজেই এখানে নিজের দায় অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। এটা ঠেকাতে হবে প্রত্যকেকে। ঘর থেকে রাষ্ট্রপর্যন্ত যারা দায়িত্বে আছে তাদেরকে এটি ঠেকাতে হবে। নারী, অন্যান্য লিঙ্গ এবং দুর্বলের উপর নির্যাতন এগুলো রুখে দাঁড়ালে ঠেকানে যায়। আমরা ত জুলাইয়ে অসম্ভব সম্ভব করে দেখিয়েছি” যোগ করেন অধ্যাপক গীতি আরা।
তিনি বলেন, “নতুন বাংলাদেশ যেই উদ্দেশ্যে হয়েছে সেটি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।”
সমাবেশের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নিপীড়নের প্রতিবাদে প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করে ৪ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো—
প্রথমত, থানা থেকে ভুক্তভোগীর ব্যক্তিগত তথ্য সোশাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া ও অভিযুক্তের পুনরায় ভিক্টিম নারীর সম্পর্কে অশালীন যৌন নিপীড়নমূলক বক্তব্য প্রচারে বাধা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলার দায়ে বিচার দাবি।
দ্বিতীয়ত, একদফা লাঞ্ছনার শিকার এই নারী শিক্ষার্থী যাদের দ্বারা অধিকতর বুলিং আর সাইবার আক্রমণের শিকার হলেন, ধর্ষণ-হত্যার হুমকি পেলেন তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি।
তৃতীয়ত, এই মব তৈরি করে নারী অমর্যাদাকে বীরত্ব বলে প্রতিষ্ঠিতকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচার দাবি।
চতুর্থত, যৌন নির্যাতন এবং নৈতিক পুলিশীর দায়ে অপরাধী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করে তাকে বরখাস্ত করার দাবি।
শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমাদের নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
একটি স্পর্শকাতর অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে কেন মামলা করার পরামর্শ দেয়া হলো তা বোধগম্য না শিক্ষক নেটওয়ার্কের। বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তি যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিরত তাই এ বিশ্ববিদ্যালয় যৌন নির্যাতন দমন সেলে বিষয়টি তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া যেত। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বিধি অনুযায়ী শাস্তির প্রক্রিয়ায় যাওয়া যেতো যে প্রক্রিয়ার একটি স্বাভাবিক অংশ হচ্ছে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা।
“সে পথে না গিয়ে তড়িঘড়ি করে এ ধরনের মামলা, গ্রেফতার, চাকরি থেকে ছাঁটাই এগুলো অনেকের কাছেই অতিপ্রতিক্রিয়া মনে হয়েছে এবং যা এই প্রতিক্রিয়াশীল চক্রকে উসকে দিতে প্রণোদনা হিসেবে হিসেবে কাজ করেছে বলে আমরা মনে করি।”
সমাবেশ থেকে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ৯ দফা দাবি উত্থাপন করেন শিক্ষার্থী নওরীন সুলতানা তমা। এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, কাজী মারুফুল ইসলাম, ফাহমিদুল হক, স্বপন আদনান, কিশোয়ার জাহান, সেলিম রায়হান, শিক্ষাথীদের মধ্যে বকতব্য রাখেন মুস্তাকিন বিল্লাহ ও নাফিসা, সংস্কৃতিকর্মী সুস্মিতা রায় ও ফেরদৌস আরা রুমি।