
ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
দেশজুড়ে একের পর এক ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ ও ক্ষোভের মধ্যে ঢাকার শাহবাগে ৩০টি কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে ধর্ষণে জড়িতদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করাসহ বেশ কিছু দাবি উঠে এসেছে।
শিক্ষার্থীরা দ্রুত বিচারের দাবি যেমন তুলছেন, তেমনি ভুক্তভোগী নারীর পরিচয় যেন কোনোভাবেই প্রকাশ না হয়, সেটি নিশ্চিত করার তাগিদও দিচ্ছেন।
তাদের মতে, অতীতে অভিযোগগুলোর দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচার না হওয়া ধর্ষণ চলতে থাকার একটি কারণ। সরকার পরিবর্তনের পর পুলিশ বাহিনীকে সক্রিয় করতে না পারাকেও একটি কারণ হিসেবে তুলে ধরেছেন তারা।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে এই প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
শুরুতে তারা সড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দিলেও পরে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনার অঞ্চলের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, “শিক্ষার্থীরা প্রথমে শাহবাগ মোড়ের সড়ক অবরোধ করেছিল। পরে পুলিশের অনুরোধ তারা জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নিয়েছে। আমরাও সতর্ক অবস্থানে আছি, এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়নি।”
ধর্ষণের শিকারের ছবি-পরিচয় কেন?
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া সুমাইয়া আক্তার শিমু নামে দেশকাল নিউজ ডটকমকে বলেন, “কোনো মেয়ে রেইপ হলে বা নির্যাতনের শিকার হলে সবার আগে তার পরিচয় প্রকাশ পায়, তার ছবি ঘুরতে থাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।”
ধর্ষণের অভিযোগে সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে এই তরুণী বলেন, “ধর্ষণ প্রমাণ হলে শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আর শাস্তি জনসম্মুখে হওয়া উচিত।”
রোজায় মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে শাহবাগ অবরোধ না করে জাদুঘরের সামনে যাওয়ার কথা জানিয়ে শিমু বলেন, “সরকার যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।”
`অভ্যুত্থান শেষে শান্তিপূর্ণ দেশ আশা করেছিলাম’
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী মো: নকিব চান দ্রুত বিচার।
তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী আমরা একটা শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ আশা করছিলাম। কিন্তু এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি এ দেশে নারীরা নির্যাতিত এবং ধর্ষিত হচ্ছে।”
কারণ বিচারহীনতা?
রাজধানীর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী সামহান খান বলেন, “আমাদের লড়াই ধর্ষকদের বিরুদ্ধে। এ লড়াই ততদিন অব্যাহত থাকবে যতদিন ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত না করা যাবে।”
শিক্ষার্থী রোভা নেওয়াজ বলেন, "সাম্প্রতিক সময় ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনা বাড়ার বড় কারণ পূর্ববর্তী ধর্ষণের বিচার না হওয়া আর আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ না করা।”
কলেজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিফ হোসন। এই প্রতিবাদ দেখে তিনি থমকে দাঁড়ান, যোগ দেন বিক্ষোভে।
তার মতে, সরকার পরিবর্তনের পর পুলিশ এখনও সক্রিয় না, তারা তাদের কাজ সঠিকভাবে করছে না। ফলে অপরাধীরা অপরাধ করার সাহস পাচ্ছে।
“দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে না হলে এ ধরনের অপরাধ কমবে না:, বলেন তিনি।
সমাবেশে ছয় দাবি
শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ চলাকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ছয়টি দাবি তুলে ধরেছেন। এগুলো হলো:
১. ধর্ষকের শাস্তি জনসম্মুখে প্রকাশ্যে নিশ্চিত করতে হবে।
২. ধর্ষকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি থাকতে হবে।
৩.কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে ২৪ ঘণ্টার ভেতর গ্রেপ্তার, মেডিক্যাল রিপোর্ট, ভুক্তভোগীর জবানবন্দি এবং সাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা ভেতর প্রকাশ্যে ধর্ষকের ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে।
৪. কোনো ধর্ষণের বিচার সালিশি করে সমাধান করা যাবে না এর বিচার নিশ্চিত করবে শুধুই রাষ্ট্র।
৫. এখনও পর্যন্ত চলমান সকল ধর্ষণের বিচার আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে করে আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জবাবদিহি করবে।
এবং
৬. গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে ধর্ষণের শিকারদের বিচার বঞ্চিত করা যাবে না।