ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, হত্যাকাণ্ড বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে পূর্বঘোষিত গণমিছিল কর্মসূচি স্থগিত করেছে বামপন্থি ১৫টি সংগঠন।

শনিবার (১৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সমাবেশ থেকে গণমিছিল কর্মসূচি স্থগিত করে সাতটি দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন বলেন, “জুলাই-আগস্টে রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারকে বিতাড়ন করা হয়েছে। বৈষম্যহীন সমাজের আকাঙক্ষায় লাখো মানুষ এই গণআন্দোলনে সামিল হয়েছিল। মানুষ আশা করেছিল হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে তারা একটা নিরাপদ সমাজ পাবে, পাবে স্বস্তির জীবন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর আমাদের আশা ভঙ্গ হয়েছে। সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। অভ্যুত্থানের পরপরই বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। মব সন্ত্রাসের নামে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা, পাওনা টাকার দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের হত্যা, রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যা, চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী হত্যাসহ কোন অপরাধের বিচার করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সামর্থ হয়নি। সরকারের ব্যর্থতা এবং বিচারহীনতার দীর্ঘ ইতিহাস অপরাধীদের অপরাধ সংঘটিত করতে উৎসাহ জুগিয়ে যাচ্ছে।”

“পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের আমলে নানা গুম, খুন, ধর্ষণের বিচার করার সুযোগ এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছিল এবং এখনও আছে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, তনু হত্যাকাণ্ড, আফসানা হত্যাকাণ্ড, নুসরাত হত্যাকাণ্ড, মুনিয়া হত্যাকাণ্ড, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী দ্বারা নোয়াখালীতে ধর্ষণ, হিন্দু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলা-লুটপাট, শ্রমিক হত্যার বিচার না করে এই সরকার স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের দীর্ঘ বিচারহীনতাকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সরকার অভ্যুত্থানের ৭ মাস পার হলেও জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে ব্যর্থ হয়েছে। আহতদের সুচিকিৎসা এবং শহীদ পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মুখে অভ্যুত্থানের চেতনার কথা বললেও কার্যত তার কোনো ফলাফল দেশবাসী দেখতে পাচ্ছে না।” বলেন রায়হান উদ্দিন।

সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (বিএসএল) সাধারণ সম্পাদক গৌতম শীল বলেন, সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, হত্যাকাণ্ড বন্ধে সরকার কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি। উল্টো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী নারী নিপীড়নকারী মব সন্ত্রাসীদের পরোক্ষ সমর্থন অপরাধীদের মনোবল দৃঢ় করেছে।

“আছিয়ার মৃত্যুতে সারাদেশে শোকাহত। কিন্তু আছিয়ার মতো ঘটনা বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। বরগুনায় কিশোরী ধর্ষণ, বিচার চাওয়ায় কিশোরীর বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। সরকার ধর্ষকদের বিচার করতে না পারলেও, ধর্ষণের প্রতিবাদে আন্দোলনকারী ওপর খড়গহস্ত হয়েছে। পুলিশ দিয়ে হামলা করে পরবর্তীতে তাদের নামেই মামলা করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্রমাগত অভ্যুত্থানের চেতনা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। সকল নাগরিকের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।”বলেন- গৌতম শীল।

সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নান্নু বক্তব্য দেন।

সমাবেশ থেকে সাত দাবি জানানো হয়। তাদের দাবিগুলো হলো-

১. আছিয়াসহ সব হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার করতে হবে।

২. ‘ব্যর্থ’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অপসারণ করতে হবে।

৩. জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে।

৪. মসজিদ, মন্দির, মাজারে হামলাকারী মব সন্ত্রাসীদের বিচার করতে হবে।

৫. চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ, যৌথ বাহিনী দ্বারা শ্রমিক হত্যার বিচার করতে হবে।

৬. সাগর-রুনি, তনু, আফসানা, মুনিয়াসহ পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের আমলে সংগঠিত হত্যার বিচার করতে হবে।

৭. হিন্দু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলা, লুটপাটের বিচার করতে হবে।