কর্মবিরতি প্রত্যাহার, আড়াই ঘণ্টা পর মেট্রোর টিকিট বিক্রি শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১০:৫৬

ছবি: সংগৃহীত।
মেট্রোরেলের কর্মীদের মারধরের ঘটনায় জড়িত এমআরটি পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস পেয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছেন মেট্রোরেলের কর্মীরা। এর ফলে আড়াই ঘণ্টা পর সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মেট্রোরেলের একক যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু হয়। এতে যাত্রীদের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) জেনারেল ম্যানেজার ইফতেখার হোসেন বলেন, “মেট্রোরেলের কর্মীরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দিয়েছেন। এখন মেট্রোরেলের অপারেশন পুরোদমে চলছে।”
মেট্রোরেল কর্মী ও এমআরটি পুলিশ বিবাদ মিটেছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ইফতেখার হোসেন বলেন, “এটা একটি সরকারি প্রক্রিয়া। ধীরে ধীরে সমস্যাটির সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।”
জাকির হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, সকাল থেকে বন্ধ থাকার পর সাড়ে নয়টার দিকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। এরপর তিনি টিকিট কাটেন।
এর আগে সকাল থেকে মেট্রোরেলের কর্মীরা কর্মবিরতি পালন করলেও বন্ধ ছিল না মেট্রো চলাচল। সকাল থেকেই বিদ্যুৎচালিত এই ট্রেন চললেও যেতে পারননি সবাই। একক যাত্রার টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকায় শুধুমাত্র এমআরটি বা র্যাপিড পাসধারী যাত্রীরা যাতায়াত করেছেন। ফলে একক যাত্রার টিকিট কাটার অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা পড়েন ভোগান্তিতে।
এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন যাত্রীরা। উপায় না দেখে অনেকে সড়কপথে রওনা হন। আবার কেউ কেউ রিকশা বা বিকল্প উপায়ে যান তাদের গন্তব্যে।
কেন কর্মবিরতিতে যায় মেট্রোরেলের কর্মীরা
মেট্রোরেল কর্মীদের অভিযোগ, রবিবার বিকাল সোয়া পাঁচটার দিকে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের চারজন কর্মীকে মৌখিক ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এমআরটি পুলিশ সদস্যরা। এর প্রতিবাদে মধ্যরাতে ‘ঢাকা ম্যাচ ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দে’র ব্যানারে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রবিবার সোয়া পাঁচটার দিকে দুজন নারী কোনো পরিচয়পত্র না দেখিয়ে সাদা পোশাকে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করেন। ওই সময় তারা ইএফও (এক্সেস ফেয়ার কালেকশন) অফিসের পাশে অবস্থিত সুইং গেইট ব্যবহার করে পেইড জোন থেকে বের হতে চান। তারা নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরা ছিলেন না, তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় সেখানে দায়িত্বরত সিআরএ সুইং গেট দিয়ে বের হওয়ার কারণ জানতে চান।
এতে পুলিশের কর্মকর্তারা উত্তেজিত হয়ে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে এমআরটি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে চলে যান। পরে একইভাবে দুজন এপিবিএন সদস্য সুইং গেট ব্যবহার করে সুইং গেট না লাগিয়ে চলে যান৷ এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারাও আগের ঘটনার জের ধরে তর্কে জড়ান।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, কিছুক্ষণ পর পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে আরও কয়েকজন পুলিশ এসে দায়িত্বে থাকা সিআরএর সঙ্গে ইএফওতে তর্কে জড়ান। ইএফও থেকে বের হওয়ার সময় কর্মরত সিআরএর কাঁধে বন্দুক দিয়ে আঘাত করে এবং কর্মরত এক টিএমও’র (টিকিট মেশিন অপারেটর) শার্টের কলার ধরে এমআরটি পুলিশ বক্সে নিয়ে গিয়ে মারধর করে।
এ সময় গুলি করার জন্য বন্দুক তাক করে। তখন স্টেশনের স্টাফ ও যাত্রীরা এমআরটি পুলিশের হাত থেকে কর্মরত টিএমওদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছয়টি দাবি জানায় মেট্রোর কর্মীরা। দাবিগুলো হলো-
এক কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করতে হবে। বাকি পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দিতে হবে, তাদেরকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
মেট্রোরেল, মেট্রো স্টাফ ও যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী গড়ে তুলতে হবে।
এমআরটি পুলিশকে বিলুপ্ত করতে হবে। স্টেশনে দায়িত্বরত সিআরএ, টিএমও, স্টেশন কন্ট্রোলারসহ অন্যান্য কর্মীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
অফিসিয়াল পরিচয়পত্র বা অনুমতি ছাড়া কেউ যেন স্টেশনের পেইড জোনে প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। আহত কর্মীর সম্পূর্ণ চিকিৎসার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে।
এমআরটি পুলিশের ডিআইজি সিদ্দিকী তানজিলুর রহমান বলেন, “ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এমআরটি পুলিশের একজন ওসিকে ক্লোজ করা হয়েছে। এছাড়া একজন এসআইকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তারা যেহেতু অন্যায় করেছে, তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া হবে।"